রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ফলিত গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন রফিকুল ইসলাম। প্রথম বর্ষে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উঠেন। তখন থেকেই পেয়ে যান ‘ছাত্রশিবির' ট্যাগ। এজন্য চার মাস জেলও খাটতে হয় তাকে। জেলে বসেই দেন দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। তারপর নানা প্রতিকূলতায় ৩.৮০ রেজাল্ট নিয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। আবার মাস্টার্সে ভর্তির পর ‘থিসিস জালিয়াতির’ অভিযোগে তার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ফলে ১০ বছরেও প্রকাশ করা হয়নি রফিকুলের স্নাতকোত্তরের ফলাফল। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহালের আবেদন করেন রফিকুল। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিভিউ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চলতি মাসের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের মাধ্যমে ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন বিবেচনা করে তার ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও তার পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন ভালো ফলাফল করায় ছাত্রশিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফলিত গণিত বিভাগ থেকে তুলে নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন রফিকুলকে। এ সময় চার মাস সাত দিন কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে। কারাগারে থেকে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সেখানেও প্রথম হন রফিকুল। এভাবেই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অনার্সে ৩.৮০ পেয়ে বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।
অনার্সে প্রথম স্থান অর্জন করে ২০১৪ সালে মাস্টার্সের থিসিস নেন তিনি। এদিকে, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট ফলিত গণিত বিভাগে দুজন প্রভাষক চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে তিনি আবেদন করেন। তবে তার শিক্ষক হওয়া আটকাতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রফিকুলের বিরুদ্ধে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। এভাবেই মাস্টার্সের সব পরীক্ষা শেষ করেও থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬১তম সিন্ডিকেট সভায় তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গত বছরের অক্টোবরে আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে উপাচার্য বরাবর আবেদন করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি আমার জালিয়াতির কোনো প্রমাণ পায়নি। ফলে আমি আশা করছি ১০ বছর ৬ মাস পর আমার সনদ ফেরত পাব। জুলাই-আগস্টে আমার শত শত শহীদ ভাইয়ের আত্মত্যাগের ফলেই আমার অধিকার ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার জন্য আবার আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৫ সালেই আমি ঢাকা চলে আসি। এরপর আল্লাহর রহমতে কখনো বসে থাকতে হয়নি। তবে পুরোনো একটা বিষয় তো রয়েই গেছে। সেখান থেকেই হয়তো আবার আবেদন করব।
মন্তব্য করুন