বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাকৃবির হলে সিট পাচ্ছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

জুলাই বিপ্লবের ৬ মাস না যেতেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বেশিরভাগ আবাসিক হলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে নিজেদের দল ভারী করতে ছাত্রদলের নেতারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হলে তোলার সুপারিশ করছে। হল প্রশাসন ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে এমনটিই অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি হলের প্রভোস্টকে জানিয়েই হলে থাকছেন তারা। এদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে হলে হলে পুনর্বাসনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর হল থেকে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে যারা হলে ছিল শিক্ষার্থীরা তাদের বের করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি আবার হলগুলোতে ঠাঁই পেয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অংশ নিচ্ছেন হলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও। অনেকেই ঠাঁই পেয়েছেন ছাত্রদলের সুপারিশে। আবার অনেকেই প্রভোস্টের সঙ্গে সখ্যর বশে। আবার অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গেও তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন হলের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্তৃত্ব সর্বত্র বিরাজমান ছিল। হলগুলোতে রাজনীতির নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, গেস্টরুমে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, বিনামূল্যে ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ের খাবার খাওয়া ছিল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক অভিযোগ। গণঅভ্যুত্থানের পরে ৬ মাস পার হতে না হতেই হলগুলোতে আবারও পুনর্বাসন করা হচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, ফজলুল হক হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, আশরাফুল হক হল, শাহজালাল হল এবং শহীদ জামাল হোসেন হলে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শুধু কর্মীই নয় রুবেল-সবুজ কাজী এবং রিয়াদ-মেহেদী কমিটির অনেক পদপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা অনায়াসেই হলে থাকছেন। এসব নেতা একসময় গেস্টরুমসহ বিভিন্ন নির্যাতনে জড়িত ছিল বলেও জানান তারা।

এতকিছুর পরও কীভাবে হলগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুনরায় ঠাঁই পেল- হলের শিক্ষার্থীদের কাছে তা জানতে চাওয়া হলে প্রভোস্ট এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় উঠেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, ছাত্রলীগের দুই নেতা সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু হলে উঠেছে। যার মধ্যে একজন শহীদ নাজমুল আহসান হলের ছাত্রলীগ নেতা। ৫ আগস্টের পর তাকে নিজ হল থেকে বের করে দেয় ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আমরা হলের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা জানার পর তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা আমাদের জানান, হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে তারা হলে উঠেছেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে হল প্রভোস্ট কীভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হলে থাকার অনুমতি দেন সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফজলুল হক হলের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হলে পুনর্বাসন করছেন। গণঅভ্যুত্থানের পরে যেসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই এখন বিভিন্ন হলে অবস্থান করছেন। ছাত্রদলের নেতারা ছাত্রলীগ নেতাদের হলে তুলে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন যাতে পরবর্তীতে ওই হলটি ছাত্রদল নেতা নিজের দখলে নিতে পারেন।

এ বিষয়ে বাকৃবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এএম শোয়াইব বলেন, আমি যতদূর জেনেছি বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের রুবেল-কাজী কমিটির পদপ্রাপ্ত অনেকে হলে আছেন। আমি প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচার করে বহিষ্কার করা হোক। যারা ছাত্রলীগ করে হলের বাইরে চলে গেছেন তারা নিশ্চয়ই নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যারা এই নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত তাদের কোনো প্রশ্রয় আমি দেব না। ছাত্রলীগ একটি নিষিদ্ধ সংগঠন তাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে ছাত্রদল সম্পৃক্ত হতে পারে না।

এ বিষয়ে বাকৃবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো আতিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদধারী ছাত্রলীগের নেতারা হলে না থাকুক। ছাত্রলীগের কেউ হলে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতারা হলে উঠতে পারে। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ছাত্রদলের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রলীগ নেতাকে হলে তুলেনি।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির কালবেলাকে বলেন, হলে কোন শিক্ষার্থী থাকবেন বা থাকবেন না সেটি নির্ধারণ করার দায়িত্ব হল প্রশাসনের। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের এখানে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পুনরায় হলে ওঠার ক্ষেত্রে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সহায়তা বিষয়ক কোনো তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি। এরকম কোনো তথ্য-প্রমাণ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলে তোলার অভিযোগের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শরীফ-আর-রাফি কালবেলাকে বলেন, হলের প্রভোস্ট হিসেবে আমার প্রধান দায়িত্ব হলো- কোনো শিক্ষার্থী যাতে বাইরে থেকে কষ্ট না করে। এ কারণে আমি ছাত্রদের কাছে তালিকা চেয়েছিলাম। আগে ছাত্রলীগ কর্মী ছিল এমন কারও বিরুদ্ধে যদি র‍্যাগিং বা অন্যায় কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকে এবং শিক্ষার্থীরা যদি তাদের হলে থাকতে দিতে না চায়, সেই নামগুলো জানাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তালিকা আমি হাতে পাইনি।

তিনি আরও বলেন, যাদেরকে হলে তোলার পর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে তারা আগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছিল, তার কোনো প্রমাণও তারা দিতে পারেনি। এমনকি এ বিষয়ে কেউ আমার সঙ্গে কোনো আলোচনাও করেনি। হলের শিক্ষার্থীরা যদি কারও অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানায়, তবে তাকে হলে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি। তাদের সব আলোচনা শুধু ফেসবুককেন্দ্রিক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো রুহুল আমিন বলেন, একজন শিক্ষার্থীর দলীয় পরিচয় ব্যতীত বৈধ শিক্ষার্থী হলে তারা হলে সিট পাওয়ার অধিকার রাখে। সেভাবে হলে উঠলে দোষের কিছু নেই। আমি যতদূর জানি তারা সংগঠনের পরিচয়ে হলে উঠেনি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের যে হলে উঠানো হয়েছে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো শহীদুল হক কালবেলাকে বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা ছিল আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করে বের করে দিয়েছি। এরকম আরও যদি জানতে পারি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানালেন ২৫ বিদেশি নাগরিক

কুয়েতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

কমিটি ঘিরে বিরোধ, বৈষম্যবিরোধীদের একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

ঝিনাইদহে তিনজনকে গুলি করে হত্যা

এবার কড়াইল বস্তিতে আগুন

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ১৩ দেশের শিল্পী

ডিবির হারুনের ‘সুইস ব্যাংক’ ঠিকাদার সাদেক ও এসএস গ্রুপ

খিলগাঁওয়ে ভয়াবহ আগুন / সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে : ফায়ার সার্ভিস

ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নেতাদের ইলিয়াসের হুঁশিয়ারি

১০

ভিসা বাণিজ্য / ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তা ও আ.লীগ নেতাসহ আটক ৫

১১

ভাঙ্গায় আমি সোনা ফলাব : বাবুল 

১২

চলন্তিকায় নিজ বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন আমিনুল

১৩

ভিসির বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

১৪

রিকেলটনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে আফগানদের উড়িয়ে দিল প্রোটিয়ারা

১৫

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঠেকাতে জড়ো হচ্ছেন আরব নেতারা

১৬

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি, বড়াইগ্রাম থানার ওসি প্রত্যাহার

১৭

স্ত্রীকে ধর্ষণের ভয়ংকর প্রতিশোধ, যুবককে ডেকে নিয়ে হত্যা

১৮

জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না : অ্যাটর্নি জেনারেল

১৯

রাশমিকার কাছে পাত্তাহীন দীপিকা-প্রিয়াংকা

২০
X