বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ফ্লোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ছয় ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ বলেন, আমরা আমাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি, তিনি আমাদের সঙ্গে বসেননি। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিতে বললে তিনি তা করেননি। সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না জানিয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য গোপন সিন্ডিকেট ডাকেন উপাচার্য। কোথায়, কখন কাকে বদলি করবেন, কোথায় কী হবে এগুলো তার মাথা থেকে আসে না। তিনি আমাদের দাবি না মেনে বাইরের আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের যুক্তি ও পরামর্শ শুনে এসব কাজ করছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের আওয়ামী দালালদের কথা শুনে বিভিন্ন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিফলন ঘটুক। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন অথচ, তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। গত ২৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগকে দরজা ভেঙে ছাড়ানো ও ২৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক আন্দোলন করতে পারে, ভুল-ত্রুটি হতে পারে কিন্তু একজন অভিভাবক সমতুল্য উপাচার্য কীভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলার বিষয়টিতে বোঝা যায় তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন। অনতিবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
এদিকে এসব উদ্ভূত পরিস্থিতির ঘটনার পেছনে উপাচার্য দায়ী করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীনকে।
উপাচার্য শুচিতা শরমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছি এরকম গুজব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর পেছনে কয়েকজন স্বার্থান্বেষী শিক্ষকসহ তিন ব্যক্তি জড়িত। যারা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ বহিঃস্থ সিন্ডিকেট সদস্য যারা, তারা সবাই বর্তমান সরকার ও জুলাই চেতনার ধারণ করা ব্যক্তি।
তিনি জানান, শনিবার আমাদের সিন্ডিকেটের জরুরি মিটিং ছিল। ১০ জন সদস্য নিয়ে সফলভাবে আমরা মিটিংটি করেছি। কয়েকজন এতে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। এ সময় ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমার বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নানা কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়। বুলডোজার দিয়ে বাড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া, আগুন দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরই চেষ্টা করছি একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান উন্নয়নের। অবকাঠামো উন্নয়নর জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, দেখা করেছি। ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। কিন্তু শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কয়েক ব্যক্তি নানা ইস্যু সৃষ্টি করে কিছু শিক্ষার্থীকে উসকে দিচ্ছেন। যেটা কাম্য নয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত ও বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু এখানে তো আমার সংশ্লিষ্ট থাকার কথা না। বরং আমরা তাদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই। উপাচার্যসহ আমরা যে তিনজন আছি এসব উদ্ভূত পরিস্থিতি একসঙ্গে বসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সমাধান করা যেত।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে আমাকে দায়িত্ব পালন করার জন্য উপাচার্য কোনো সহযোগিতা করেনি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। দায়িত্ব দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করতাম। সুযোগ কেন দিচ্ছেন না তা উপাচার্যই জানে। যোগদানের পর সাড়ে তিন মাসে একটা ফাইলও আমার টেবিলে আসেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সিদ্ধান্ত উপাচার্য একাই নিয়ে থাকে। আমি আসার পরে আমাদের কোনো মিটিংয়ে ডাকেন না, কোনো সিদ্ধান্তে আমাদের মতামত নেওয়া হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা যে দাবি দেন-
১. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন চলমান যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা ষড়যন্ত্রমূলক হয়রানি মামলা অবিলম্বে ৬ ঘণ্টার ভেতর প্রত্যাহার করতে হবে।
২. অবিলম্বে সিন্ডিকেট মেম্বারদের নাম প্রকাশ ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩. আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর ও নারী কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত রেজিস্ট্রারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে অতিদ্রুত অপসারণ ঘোষণা করতে হবে। ভিসি দপ্তরে যেসব আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আছে তাদেরও অপসারণ করতে হবে।
৪. ছাত্র সংসদের জন্য শিক্ষকদের দ্বারা কমিটি করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে (বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী যে আইনটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে না সেটার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে অনুসরণ করবে)। ২৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারী এবং ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুরে জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সব কর্মীকে অবিলম্বে একাডেমিক এবং আইনি শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনসহ গত ৩ ডিসেম্বরের দাবিগুলোর অগ্রগতি কতদূর তা শিক্ষার্থীদের কাছে ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে।
মন্তব্য করুন