আওয়ামী লীগ শাসনামলে মাঠে না থাকলেও ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। ছাত্রদলের কর্মসূচি তেমন একটা পালন করতে দেখা না গেলেও রয়েছে চাঁদাবাজি এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ।
জানা গেছে, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৬ জুন ইমরান হোসেন প্রধানকে আহ্বায়ক এবং আল আমিনকে সদস্য সচিব করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ২৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৩ মাস হলেও প্রায় চার বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে ইউনিটটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে ২৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ২০ জন সদস্যই মাঠে সক্রিয় নন, এমনকি অধিকাংশ নেতাকর্মীর ছাত্রত্বও শেষ হয়েছে অনেক আগেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান দলীয় কর্মসূচির প্রতি উদাসীন থাকলেও ব্যস্ত সময় পার করেন বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এবং নিয়োগে প্রভাব বিস্তারে। অর্থনীতি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হলেও সরকার পরিবর্তনের পর প্রভাব খাটিয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছেন ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে। তবে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করেন তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার দীর্ঘদিনের পরিচালককে পরিবর্তনের পেছনেও ইমরান প্রধান এবং ছাত্রদলের এক যুগ্ম আহ্বায়কের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আল আমিন। গত ৫ আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন মাত্র একবার। বিভাগীয় যৌথ কর্মিসভা, বিএনপির ৩১ দফা কর্মশালা, ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্র ঘোষিত মানবাধিকার দিবস কিংবা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তার চাচা গফরগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের রেখে যাওয়া ব্যবসা দেখাশোনাতে ব্যস্ত থাকায় তিনি ক্যাম্পাসে সক্রিয় নন।
এ বিষয়ে সদস্য সচিব আল আমিন বলেন, এসব বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি কঠিন সময়ে সংগঠনকে সময় দিয়েছি। এখন পারিবারিকভাবে একটু ব্যস্ত আছি, তাই ক্যাম্পাসে সময় দিতে পারছি না। তবে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসের সব বিষয়ে খোঁজ রাখার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, চাঁদাবাজি, নিয়োগে প্রভাব রাখা কিংবা অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক পরিবর্তনের বিষয়েও আমরা জানি না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিষয়গুলো জানেন।
কমিটির নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, আহ্বায়ক কমিটি যখন করা হয়, তখন কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে অনেকেই নাম জমা দিয়েছিলে। তবে কমিটি ঘোষণার পর থেকে আমরা ৭-৮ জনই সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হুসাইন বলেন, এটি ২০২১ সালের কমিটি। কমিটি আরও আগেই বিলুপ্তির কথা থাকলেও সে সময়ে দেশের পরিস্থিতির জন্য নতুন করে আর কমিটি হয়নি। বর্তমান বাস্তবতায় যত দ্রুত নতুন কমিটি গঠন করা যায় ততই ভালো। আমরা চাই দ্রুততম সময়ে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করে কমিটি করা হোক। পাশাপাশি বিগত ১৫ বছরে হামলা-মামলার স্বীকার ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন