পুরোনো নামে ফিরে যাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হলসমূহ। সিন্ডিকেট সভায় ১৯টি স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী সরকারের শাসনামলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বদলে দেওয়া হয়েছিল এসব নাম।
৫ আগস্টের পর সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত খুবি ক্যাম্পাস থেকে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত সব নাম পরিবর্তনের জোরালো দাবি ওঠে। এ নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট নাম বদলে পুরোনো নামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে ভিসি ছিলেন প্রফেসর ড. গোলাম রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, উন্মেষ ও বিকাশে তার অবদান অনবদ্য। গত বুধবার খুবির পুরোনো প্রশাসনিক ভবনে 'প্রফেসর ড. গোলাম রহমান প্রশাসনিক ভবন' নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। এ ভবনের আগের নাম ছিল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবন।
খুবির ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত শুভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার গোড়াপত্তন করেছিলেন গোলাম রহমান। তাকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছি। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর নাম বদলের দাবি জোরদার হয়ে উঠলে একটি কমিটি করা হয়। যারা সবার সঙ্গে কথা বলে একটি সুপারিশ করেন। তার আলোকে সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেন খুবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান। এতে বলা হয়, এখন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামকরণ হবে বীর শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন হল। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম হবে 'বিজয় ২৪ হল'। ড. সত্যেন্দ্র নাথ বসু একাডেমিক ভবন, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে পুরোনো নামে একাডেমিক ভবন-০১, একাডেমিক ভবন-০২. একাডেমিক ভবন ০৩। নতুন জয় বাংলা একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে, একাডেমি ভবন-০৪। শহীদ তাজউদ্দীন প্রশাসনিক ভবন হয়েছে 'প্রশাসনিক ভবন'। লালন সাঁই মিলনায়তনের নাম টিএসসি ভবন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী চিকিৎসাকেন্দ্র এখন থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুলতানা কামাল জিমনেসিয়াম এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় গবেষণাগার এখন থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার।
শিক্ষকদের চারটি আবাসিক ভবনের নামেও পরিবর্তন এসেছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা ভবনের নাম 'প্রফেসর'স কোয়ার্টার, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দার আবাসিক ভবন এখন 'অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর'স কোয়ার্টার, শহীদ বুদ্ধিজীবী গোবিন্দ চন্দ্র দেব আবাসিক ভবন এখন 'অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর'স কোয়ার্টার' এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী এস এম এ রাশিদুল হাসান আবাসিক ভবন এখন থেকে 'লেকচারার'স কোয়ার্টার'। তবে মাইকেল মধুসূদন দত্ত অতিথি ভবন, কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা ভবন নাম তিনটি অপরিবর্তিত রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সাবেক ভিসি মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান চেতনার রাজনীতি করতে গিয়ে ঢাকা থেকে মুনতাসীর মামুনকে অতিথি করে নিয়ে এসে পুরোনো সব নাম বদলে দিয়েছিলেন। আমাদের এই অঞ্চল বা এই ক্যাম্পাসের সঙ্গে সম্পর্কহীনদের নামে নামকরণ করেছিলেন। বিপ্লব উত্তর বাংলাদেশে খুবি সিন্ডিকেট যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিমত তাদের।
তবে এ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের ছাত্র মহিবুল্লাহ মুহিব বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তনের দাবি ছিল। কিন্তু অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। আবার মেয়েদের হলের নাম বিজয় '২৪ কোনোভাবেই মানানসই নয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী জাহিদা সুলতানা রিমা বলেন, মেয়েদের হলের এমন নাম হোক যেন ১০-২০ বছর পর পাল্টানোর দরকার না হয়। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রিলেটেড কোনো নাম আমরা চাই না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম বলেন, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরোনো প্রশাসনিক ভবনে নতুন নামফলক স্থাপন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীসহ সব মহলের দাবি ছিল রাজনৈতিক নামগুলো বদলের। নতুন নাম সম্পর্কে কারো আপত্তি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে অন্য কোনো নাম চূড়ান্ত করার সুযোগ থাকছে।
মন্তব্য করুন