শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা। এ সময় তারা বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, ইসলামী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্র শিবিরের অবস্থান সম্পর্কে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে ‘মেধাবীদের মুখোমুখি ছাত্রশিবির- Shibir Meets Brilliance’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় নানা প্রশ্নের উত্তর দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সাবেক সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান, বর্তমান সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল।
এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান সম্পর্কে শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। তাদের কতগুলো চাহিদা ছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ১২ বছর ছিলো গণতান্ত্রিক পাকিস্তান। এ সময় কোনো সমস্যা হয়নি। পরের এগারো বছরে ছিল সেনা শাসন। এ সময় ছিল পাকিস্তানের কলঙ্কজনক অধ্যায়। যার প্রভাব বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় জায়গাতেই পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটা সে সময়ের শাসকের অযোগ্যতা ও অথর্বতার প্রমাণ। মানুষের কোনো বাকস্বাধীনতা ছিল না। এর জন্যই মানুষ লড়াই করেছিল। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করেছে। তবে, তাদের ক্ষমতা দেয়নি। ১৯৭১ এ শেখ মুজিব কখনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি। তিনি জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান বলে তার বক্তব্য শেষ করেছিলেন। তিনি এত বিশাল পাকিস্তান রেখে এত ছোট বাংলাদেশের শাসন চায়নি। তবুও এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপামর জনতা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছে।
গত কয়েকদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শাহবাগী গোসল কর’ স্লোগানটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। এর সম্পর্কে সাদ্দাম বলেন, শাহবাগী গোসল কর শব্দগুচ্ছটি ছিল আয়রনি ( রূপক)। বাংলাদেশে শাহবাগ থেকেই ফ্যাসিবাদ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উত্থান হয়েছিল। তারা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তখন সরকার আইন সংশোধন করে বিচার প্রক্রিয়া না মেনে নতুন আইনে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়েছিল। শাহবাগীদের এ দাবিই ছিল সরকারের মূল চালিকাশক্তি। এভাবেই শাহবাগে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুরু হয়েছিল। এরাই শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে, মাথা খেয়ে মনস্টারে পরিণত করেছিল, যেমনিভাবে শেখ মুজিবকে বাকশাল কায়েমে বাধ্য করেছিল। আমরা এ জন্য আয়রনি দিয়ে বুঝিয়েছি নতুন বাংলাদেশ পরিশুদ্ধভাবে রাজনীতি করতে হবে।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভূমিকা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন এক শিক্ষার্থী। তার প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এ আন্দোলন ছিল ছাত্র জনতার আন্দোলন। এ আন্দোলনের শুরু থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বশীলেরা যুক্ত ছিল। ইন্টারনেট ব্লাক আউটের সময়ে আহতদের চিকিৎসা, গ্রেপ্তারকৃতদের কোর্টে সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ দেশব্যাপী পরিচালনা করা আন্দোলনের নেতাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এর ভেতরেই সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করে দাবি মানিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা আন্দোলনের অংশীজনের সাথে আলোচনা করে ৯ দফা প্রণয়ন করি। এর মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিও ছিল। এ ছাড়াও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা বাদেও স্থান নির্ধারণ, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, আন্দোলনে ডিফেন্স দেওয়ার কাজ অর্গানাইজে সাহায্য করেছে ছাত্রশিবির।
ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম সম্পর্কে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নে রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রশিবির ৫ দফায় ৩১টা বিভিন্ন শাখার আওতায় আমারা অর্থাভাবে থাকা শিক্ষার্থীদের খোঁজ পেলে সাবেক ভাই ও শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে তাদের সহায়তা করেছি। এ ছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।
কর্মসূচিতে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি না থাকা সম্পর্কে জানতে চেয়ে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নে রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, কর্মসূচিতে না আসলে হলে ফিরে খবর আছে এমন বার্তা ছাত্রশিবির কাউকে দেয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ছাত্রশিবির কাউকে বাধ্যও করে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রচার করেছি। কিন্তু আমাদের বোনেরা আসেনি। আমাদের বোনেদের হয়ত লজ্জাবোধের কারণে হতে পারে। তবে, কিছুদিন আগেও আমাদের কোরআন শরিফ বিতরণ কর্মসূচি ছেলেদের হলের সামনে যে উপস্থিতি ছিল তার থেকে মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বেশি ছিল।
কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল। এ সময় শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন