বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ভিসি ও প্রো-ভিসির পাল্টাপাল্টি নোটিশে তাদের দ্বন্দ্ব এখন জন প্রকাশ্যে। গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে উপ-উপাচার্যের দেওয়া এক নোটিশে বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বসতে চান তিনি। তার একদিন পরে অর্থাৎ ৬ ফেব্রুয়ারিতে পালটা নোটিশ দিতে নির্দেশ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। উপাচার্যের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, উপ-উপাচার্যের নোটিশটি নিয়মবহির্ভূত।
এ নিয়ে চলছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি থাকার কারণেই এ ধরনের বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে উপাচার্য দীর্ঘদিন ধরে উপ-উপাচার্যকে (প্রো-ভিসি) অসহযোগিতা করে আসছেন বলে দাবি করছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। তবে উপ-উপাচার্য ও উপাচার্যের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই বা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এমনকি এর আগে ভিসিবিরোধী আন্দোলনে উপ-উপাচার্য ইন্ধন দিয়েছেন এমন সন্দেহে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোটিশ ও পালটা নোটিশ কোনোটাই যুক্তিসংগত সমাধান নয়। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুখকর নয়। উপ-উপাচার্য এ ধরনের নোটিশ দেওয়ার আগে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারতেন। আবার নোটিশ দেওয়ার পরে উপাচার্য পালটা নোটিশ দিয়েছেন সেটিও ভালো বিষয় না। উপ-উপাচার্য নোটিশ দেওয়ার পরে উপাচার্য তার সাথে কথা বলে সমাধান করতে পারতেন বা নোটিশটি স্থগিত করতে পারতেন। কিন্তু কোনোটিই হয়নি, যা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাকিজ উদ্দিন সরকার স্বাক্ষরিত উপ-উপাচার্যের নোটিশে বলা হয়, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় উপ-উপাচার্যের অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অগ্রগতি নিয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়। যেখানে সব বিভাগের চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়।
উপ-উপাচার্যের নোটিশের বিপরীতে পালটা নোটিশ দিতে নির্দেশ প্রদান করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত উপাচার্যের নোটিশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য। তার নির্দেশ ও অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো পত্র কোনো দপ্তরপ্রধান, কর্মকর্তা বা অন্য কেউ শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীর উদ্দেশে প্রেরণ করতে পারেন না। যদি কেউ এরকম পত্র প্রেরণ করেন সেটি বিধিবহির্ভূত। সংগত কারণে উপ-উপাচার্যের নির্দেশক্রমে প্রেরিত পত্রটি নিয়মবহির্ভূত। উক্ত পত্রটি কোনোভাবেই কোনো শিক্ষককে আমলে না নেওয়ার জন্য উপাচার্যের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।
এদিকে উপাচার্যের নোটিশের শব্দচয়ন নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। তিনি জানান, আমার অফিস কর্তৃক চেয়ারম্যান মহোদয়দের নিকট প্রেরিত চিঠির বিপরীতে রেজিস্ট্রার প্রেরিত চিঠি যথাযথ ও বিধিসম্মত হয়নি বলে আমি মনে করি। কারণ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১১ (ক)-এর ২নং ধারা অনুযায়ী উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক দায়িত্ব পালন করার বিধান রয়েছে। আমি যোগদানের তিন মাস হয়ে গেলেও আমাকে দায়িত্ব বুঝে দেননি। এর আগে মৌখিক ও লিখিতভাবে আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য উপাচার্য মহোদয়কে অনেকবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু আমাকে একাডেমিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী কালবেলাকে বলেন, আমি একাডেমিক কার্যক্রমের অগ্রগতি ও সার্বিক অবস্থা জানার জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভার আহ্বান করেছি। যেটি আমার দায়িত্ব। আমার কাজ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে থাকা নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করা। এখানে দ্বন্দ্বের কোনো বিষয়ই নেই। আমাকে আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেই হলো।
এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও কল রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন