ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ৭২-এর সংবিধান অগণতান্ত্রিক ও প্রতারণামূলক। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ৭২-এর সংবিধানে অনেক বৈষম্য রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় একাত্মতার দেয়ালের নামে আয়োজিত আলোচনা সভাটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ বলেন, সংবিধানে অদ্ভুত অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য তৈরি করে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে ব্যবসা করে আরও একটি মারাত্মক বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক অভ্যুত্থান পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা নিয়ে এক আলোচনা সভায় আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রদায়গত যে সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তন করে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে শ্রমবিভাগ নীতি অনুসারে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে জনগণের মগজ ধোলাই করতে বিভিন্নভাবে ৭২-এর সংবিধানকে ব্যবহার করছে। ৭২-এর সংবিধান একটি অগণতান্ত্রিক ও প্রতারণামূলক সংবিধান।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে সংবিধান রচনা করতে হবে, না হলে গণতন্ত্র সফল হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত শেখ হাসিনা তো পালিয়ে গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। এই সরকার তো সংবিধান অনুযায়ী বৈধ নয়। যেহেতু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণ এই সরকারকে সমর্থন করেছে, তার মানে এটিই রাষ্ট্র মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ ছাত্র-জনতার ঘোষণাপত্র এক প্রকার হয়েই গেছে। শুধু লিখিতভাবে জানানোর প্রয়োজন বোধ মনে করলে সেটি করা বাকি মাত্র। এখন যদি রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করতে পারে, তাহলে আগামী ২০০ বছরে পারবেন কি না সন্দেহ আছে। এখনই সময় নতুন সংবিধান তৈরি করার।
অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার ভাষার মাধ্যম হবে বাংলা। একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাষ্ট্র এখনো বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার মানেই সমাজ সংস্কার। শিক্ষাব্যবস্থায় সব স্তরে সাম্য তৈরি করতে হবে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণি স্বার্থ না দেখে দেশ ও রাষ্ট্রের স্বার্থের দিকে চিন্তা করে শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। সমাজকে নেতৃত্ব দিবে এমনটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা মাধ্যম করতে হবে। দেশের সরকারের সরকার আছে, সেটা হলো ‘ওয়াশিংটন কনসেনসাস’। এরাই শ্রেণি তৈরি করে ও ইংরেজির প্রতাপ বিশ্ববিদ্যালয়ে আঁচড় করে। ইউজিসির পরিকল্পনা ওইসব জায়গা থেকে আসে। তবে আমরা অবশ্যই ইংরেজি বা অন্যভাষা শিখবো, কিন্তু তা বাংলা মাধ্যমকে উপেক্ষা করে নয়।
বাংলা ভাষার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে একটি দফায় বলা হয়, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে সব পরীক্ষা ও সবক্ষেত্রে বাংলা লেখার কথা। কিন্তু দেশে কেন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে না? আমি আশ্চর্য হই পতিত শেখ হাসিনা প্রায় ২০ বছর ক্ষমতায় থেকেও ভালোভাবে বাংলা বলতে পারেন না। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, মাতৃভাষা কতটুকু আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি। শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি না করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই শিক্ষা সর্বজনীন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন