কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কাজী নজরুল ইসলাম হলের এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সমন্বয়কসহ তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেন এবং হল ছাড়তে বাধ্য করেন।
শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভুক্তভোগীর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টরিয়াল বডির কাছে জমা দেওয়া এক লিখিত অভিযোগপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. রাহিম, তিনি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী- সমন্বয়ক এমরান হোসেন, ২০২০-২১ সেশনের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব এবং একই সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু।
অভিযোগপত্রে রাহিম উল্লেখ করেন, তিন মাস ধরে তিনি একদল শিক্ষার্থীর দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার পর তারা স্লোগান দিতে দিতে রহিমের কক্ষের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে। দরজা খোলার পর তারা কক্ষে ঢুকে বলেন- ‘১০ মিনিটের মধ্যে রুম খালি কর, নইলে রুম তালা দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু না; আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, সেটাই চূড়ান্ত।’
একপর্যায়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী তাকে হুমকি দিয়ে বলেন- ‘রুম না ছাড়লে ছাত্রলীগের মতো কইরা পিটামু, তোকে মারা ওয়ান-টু ব্যাপার।’
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৫০ মিনিটে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু মিয়াজি রাহিমকে ডাইনিং সংলগ্ন সিঁড়ির সামনে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে হেনস্তা করে। তারা বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রুম না ছাড়লে সব জিনিসপত্র ফেলে দেব। পারলে তোর কোনো বাপ আছে নিয়ে আসিস!’
রাহিম জানান, তিনি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে টিউশন হারিয়েছেন, ফলে তার থাকার বিকল্প কোনো জায়গা নেই। কিন্তু বারবার হুমকি ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তিনি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
প্রতিবেদকের হাতে আসা কিছু ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ড অনুযায়ী, অভিযুক্ত সমন্বয়ক এমরান হোসেনকে বলতে শোনা যায় ‘প্রশাসন কিছু না, আমরা যা সিদ্ধান্ত নিবো, তাই মানতে হবে। তোমাকে এখন থেকে ৫ মিনিটের সময় বেঁধে দেওয়া হলো, এর মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে হল থেকে বের হয়ে যাবা।’
অন্যদিকে হাসিব বলেন ‘রুম ছাড়বি, না হলে ছাত্রলীগের মতো করে তোকে পিটামু। তোকে মারা ওয়ান-টু ব্যাপার।’
এ ছাড়াও এমরান ও হাসিবের নেতৃত্বে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু মিয়াজিসহ আরও ২০ জন শিক্ষার্থীকে রাহিমকে হল ছাড়তে হুমকি দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হাসিব বলেন, ‘হিট অব মোমেন্টে এই কথা বলেছি। ৫ই আগস্টের পর যারা হলে উঠবে, তারা সবাই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হলে উঠবে। তাই হল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আন্দোলনের পর উঠা শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া হবে।’
একজন শিক্ষার্থী হয়ে আরেকজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মতো করে মারার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে বলেন- ‘আপনি আপনার সুবিধার্থে এই নিউজ করতেছেন।’ এই বলে ফোন কল কেটে দেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত এমরান হোসেন বলেন ‘হল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ৫ই আগস্টের পর হলে উঠেছে এ রকম শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে বের করে দেয়া হবে।’
ছাত্রলীগের মতো করে মারার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘হ্যাঁ! একথা বলা হয়েছে। তবে বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাকে বলেছি এ ধরনের কথা না বলার জন্য।’
এ বিষয়ে নজরুল হলের প্রভোস্ট মো. হারুন বলেন ‘শিক্ষার্থীদের এরকম আচরণ কাম্য নয়। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। আমি চেষ্টা করবো এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে। আমার কাছে কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগপত্র আসেনি। যেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, তাহলে এটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে।’
সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন ‘আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদেরকে শোকজ নোটিশ দেব।’
মন্তব্য করুন