রাজধানীর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌক্তিকতা পাচ্ছে না বলে ফের জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ-সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব এ কথা বলেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে মহাখালী থেকে উল্টোপথে ফিরে যায় ট্রেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে বর্তমানে মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ।
তিতুমীর কলেজ নিয়ে এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সাতটা কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে। সেই কমিটি কাজ করছে। সেই কমিটি যখন কাজ করছে, এর মধ্যে তিতুমীর বলল যে তারা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চায়। আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যে দাবি, এর স্বপক্ষে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ তিতুমীরের মতো আরও অনেকগুলো কলেজ রয়েছে। ঢাকা শহরে আছে, ঢাকার বাইরে আছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি সেখানে বলেছেন যে এ দাবি যৌক্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না। যেহেতু আরও অনেকগুলো এ রকম কলেজ রয়েছে।’
সরকার লক্ষ রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিতুমীরের যে ছাত্ররা আন্দোলনে আছে, তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা চাচ্ছে যে তাদের পড়াশোনা যাতে নির্বিঘ্ন থাকে। তাদের পড়াশোনা যাতে এই ধরনের আন্দোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সুতরাং সরকার সেটাতেও লক্ষ রাখছে।’
এরই মধ্য ইউজিসি থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে মাধ্যমিকে ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন অর্থাৎ যে সময় পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। সেই কারণে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা নীতিগতভাবে এটুকু একমত আছে যে সাত কলেজের দায়িত্ব তারা নেবে না। তবে এ বছর যারা নতুন ভর্তি হবে, তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় এবং যারা পরীক্ষা দেবে, তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়; এজন্য সরকার যেভাবে বলবে তারা সেভাবে করবে।’
সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি ছাড়াও আরও দুটি দাবি জানিয়েছে। সেটা হচ্ছে, তাদের সেখানে আরও পিএইচডি অধ্যাপক দিতে হবে। এতে আমরা একমত হয়েছি। সেখানে ১৭ জন পিএইচডি হোল্ডার আছেন, আমরা আরও দেব। দ্বিতীয় তারা আরেকটি দাবি জানিয়েছে যে গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেটা তো আমরা রাজি হয়েছি যে বরাদ্দ আরও বাড়াব।’
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দাবির বিষয়ে আমরা বলেছি, ইউজিসির কমিটি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে; সেটার ওপরেই আমরা পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।’
শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দুজন যুগ্ম সচিবকে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছি।’
তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দাবির বিষয়ে কী বলছে, এ নিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘তারা চায় শিক্ষার একটা পরিবেশ কলেজগুলোতে আসুক। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী বা অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী যারা এই আন্দোলনের মধ্যে নেই, তারা ৯০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী, তারা কিন্তু চায় যাতে পড়াশোনা অব্যাহত থাকে। শিক্ষার্থীরা যেদিন আন্দোলন করছে, সেই দিনও সেখানে অনার্স পরীক্ষা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা অংশ নিয়েছে, তারা পরীক্ষা বর্জন করেনি।’
তবে কি গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর আন্দোলন এটা, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা আপনাদের বুঝে নিতে হবে। আমি বিশ্লেষণ দিতে পারব না। আমি ঘটনা বলতে পারি।’
তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় হবে কি না, সেই বিষয়ে আপনারা পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না কেন, এমন প্রশ্নে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর অতিরিক্ত আমার কোনো বক্তব্য নেই। এখন পর্যন্ত তিতুমীরের এই দাবির যৌক্তিকতা দেখা যাচ্ছে না। যেহেতু আমরা একটি কমিটি করেছি, সেই কমিটিকে তিতুমীরের বিষয়টিও গুরুত্বে সঙ্গে দেখার জন্য বলা হয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার আগে মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটা কথা বলে ফেলা ঠিক হবে না বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন