রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে সরকারের সিদ্ধান্তের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন কলেজটির একদল শিক্ষার্থী।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার পর থেকে কলেজটির মূল ফটকে সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে তারা এ অনশন শুরু করেন। এ সময় তারা সাত দফা দাবি জানান।
অনশনে অংশ নেওয়া কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী এফ রায়হান বলেন, ‘আমি সরকারি তিতুমীর কলেজের একজন শিক্ষার্থী। তিতুমীর ঐক্যের ডাকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে নিজ দায়িত্বে আমি আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছি। তিতুমীর কলেজের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করা ও ঢাকা উত্তরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই আন্দোলন আজ সময়ের দাবি। আমাদের এই সংগ্রাম শুধু তিতুমীরের নয়, বরং সমগ্র জাতির উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অনশন কেবল আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি আমাদের সবার অধিকারের জন্য লড়াই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা যারা ন্যায়বিচার ও শিক্ষার সমতার পক্ষে, তারা এই আন্দোলনে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। আসুন, একসঙ্গে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলি।’
বাংলা বিভাগ শিক্ষার্থী বেল্লাল হাসান বলেন, ‘যেদিন সিদ্দিকুর রহমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়, সেদিন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ দেশে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার দ্বার তৈরি করে, শিক্ষা সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলব। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে দেশে শিক্ষার জন্য আর কোনো সিদ্দিক চোখ হারাবে না। শিক্ষা হবে সবার জন্য উন্মুক্ত। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হলেও তা থেকে এ দেশের মানুষ বঞ্চিত। দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান থেকে তথাকথিত মেধাবী তৈরি হয় না, তৈরি হয় তোতা পাখি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক শিক্ষার মানে তখনই নেওয়া সম্ভব, যখন প্রচলিত সিন্ডিকেট ভেঙে শিক্ষা করা হবে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং তা শুধু তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। আমি আশা করি আমার জীবনের মধ্য দিয়ে হলেও দেশের শিক্ষা সংস্কার হোক তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে। যার মাধ্যমে দেশে আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়, সিদ্দিক ভাইয়ের মতো কারও চোখ না হারাতে হয়।’
শিক্ষার্থীদের সাত দফা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাত দাবি নিয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন। দাবিগুলো হলো౼ তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা; শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন ও ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুটি বিষয় ল' এবং জার্নালিজম সাবজেক্ট সংযোজন।
এ ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।
উল্লেখ্য, সরকারি তিতুমীর কলেজকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীরা আবারও নতুন করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেন।
মন্তব্য করুন