পূর্ব ঘোষিত পাঁচ দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশের দাবিতে সরকারকে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় ঢাকা কলেজে সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এ ঘোষণা দেন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফোকাল পারসন ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আবদুর রহমান।
আব্দুর রহমান বলেন, আমরা তৃতীয় পক্ষকে সুবিধা দিতে চাই না। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন কোনো কর্মসূচি আমরা দেব না। মনে রাখতে হবে- শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরস্পর পাশাপাশি থেকে আমরা শিক্ষা অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে চাই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের রূপরেখা প্রকাশের দাবি জানাই।
ঢাকা কলেজে সব ছাত্র সংগঠনের পক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, গত কয়েক বছরে সাত কলেজের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে। ঢাবি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাত কলেজের বিষয়ে স্বতন্ত্র রূপরেখা ও রোডম্যাপ প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
প্রো-ভিসি মামুন স্যার সাত কলেজ শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত উসকে দিয়েছে। তিনি মেইন উসকানিদাতা। প্রো-ভিসি মামুন স্যার রূপান্তর টিমে থাকলে এ কার্যক্রম ব্যাহত হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিম থেকে মামুন স্যারকে অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি এবং যে স্বৈরাচারের দালাল পুলিশ হামলায় জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
ঢাকা কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে মামুন শেখ বলেন, নিউমার্কেট থানা ঘেরাওয়ের মতো এরকম সিদ্ধান্ত থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। ঢাবি প্রো-ভিসি মামুন স্যার শিক্ষকসুলভ আচরণ করেননি। তিনি আগে থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে এমন সংঘাত ঘটত না। এমন কোনো আচরণ করব না যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ খ ম রফিক বলেন, নতুন কাঠামোতে শিক্ষকদের যেন উপেক্ষা করা না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ইউজিসির কাছে সুচিন্তিত মতামত দিতে হবে। নতুন কাঠামো যেটা আসবে সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য একটি নীতিমালা প্রয়োজন হবে। সংকট নিরসনের জন্য আমাদের সব পক্ষের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ রাখতে হবে। চলমান সাত কলেজের পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম সবকিছু চলমান রাখার জন্য ইউজিসি, ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্বন্বয় প্রয়োজন আছে। উদ্ভূত বিভিন্ন ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেবে এটা আমাদের বিষয় না।
এছাড়াও পুলিশের শিক্ষার্থীকে হামলার ঘটনার জন্য পুলিশের একটা দায় আছে সে অনুযায়ী বিচারের জন্য একটা প্রত্যাশা রয়েছে। সাত কলেজের সব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান করি। ছাত্রদের সব দাবি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন কোনো রকম বিভেদ বা অনৈক্য না থাকে। আমাদের ঐক্য বিনষ্টের জন্য নানারকম চক্রান্ত চলছে। সাত কলেজের সমস্যাগুলোকে আমরা প্রত্যেকটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাড্রেস করব। উচ্চপর্যায়ের কমিটি একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর রূপরেখা দেবে।
এছাড়াও চলমান পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করলে সে যেই করুক তাকে আমরা ছাড় দেব না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদের আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবকিছুর সমাধানে যাব, যদি সমাধান না হয় তখন আমরা রাস্তায় যাব। সাত কলেজে ইস্যু নিয়ে আমাদের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।
এর আগে, রোববার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির প্রো-ভিসি মামুন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন তারা।
সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে ঢাবির সহ-উপাচার্যের বাসভবনের দিকে রওনা দিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে পৌঁছলে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দুপক্ষের উত্তেজনা। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, যা এক পর্যায়ে রূপ নেয় সংঘর্ষে।
পরে সংকট সমাধানে ভিসি অফিসের মিটিংরুমে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বৈঠকে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসিসহ অধিভুক্ত সাত কলেজের অধ্যক্ষরা। সেখানে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্তি থেকে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন