জুলাই-আগস্টের হামলাকারীদের বিচার, ক্রেডিট ফি কমানোসহ ৯ দফা দাবিতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জানা যায়, বারবার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ তুলে বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় দাবি মানার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে না দিলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
৯ দফা দাবিগুলো হলো-
১. এক মাসের মধ্যে ছাত্র সংসদের নীতিমালা প্রণয়ন করে সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে।
২. ক্রেডিট ফি ৭৫-৮০ টাকা করে নোটিশ জারি করতে হবে।
৩. সেশনজট নিরসনে একাডেমিক রোডম্যাপ দিতে হবে এবং বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. লাইব্রেরির মুজিব কর্নারকে জব কর্নার করে চাকরির বিভিন্ন বই দিতে হবে।
৫. ২৮ জানুয়ারি থেকে গোপালগঞ্জে বাস স্টপেজ করতে হবে।
৬. হামলাকারীদের বিচার আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. এক মাসের মধ্যে টিএসসি থেকে ব্যাংক অপসারণ করতে হবে।
৮. অবৈধ নিয়োগ বাতিলের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৯. শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকট দূরীকরণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, বারবার প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রশাসন শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছে কিন্তু কোনো কিছুর বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা আর আশ্বাস চাই না। আমাদের দাবিগুলো কবে পূরণ হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখসহ প্রশাসন থেকে আমরা লিখিত বক্তব্য চাই।
কৃষি অনুষদের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন সাগর কালবেলাকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। আমরা হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো কিছুর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এ সময় গত বছর হাবিপ্রবিতে দুর্নীতির মাধ্যমে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে উপাচার্য দুর্নীতির মাধ্যমে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে চাকরি দিয়েছে। ছাত্রলীগ ক্যাডার সজল প্রসাশনিক কর্মকর্তা হওয়ার পর তার বেতনের টাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে বাঁশের লাঠি তৈরি করা হয়েছিল, যার সাক্ষী আমি নিজে। অথচ এখনো তারা স্বপদে বহাল আছে এবং বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। আমরা অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ডের বিচার চাই এবং এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. এমদাদুল হাসান বলেন, ছাত্রদের এসব দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানোন্নয়নের সঙ্গেই জড়িত। এসব দাবি পূরণের জন্য আমরা কাজ করছি। দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতির জন্য এসব দাবির যৌক্তিক সমাধান হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অসম্পূর্ণ কাজ রয়েছে, যা পূরণের জন্য প্রশাসন দিন-রাত কাজ করছে। অনেক কাজই দৃশ্যমান হয়েছে, সব কাজ দৃশ্যমান হয় না এটাই স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে খুব দ্রুতই আরও অনেক কাজ করা হবে।
এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসলে উপাচার্য সব দাবি মেনে নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন