রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিমুল শিহাব নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ এবং বিচার দাবি করে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন স্থানীয়রা। মিছিলটি মহাসড়কের বিনোদপুর বাজারে গিয়ে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট অবরোধ করে তারা আগুন জ্বালান এবং অবস্থান নেন।
বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচিতে তারা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে আমি কে, বহিরাগত, বহিরাগত’, ‘শিমুল ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘প্রক্টরের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘ অ্যাকশন টু অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘রাজশাহী কলেজের অ্যাকশান, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকার নিলয় রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমরা বহিরাগত বলে ক্যাম্পাসে ঢুকলে আমাদের মেরে ফেলবে কেন? এছাড়াও আমাদের বিভিন্ন সময় টোকাই, বহিরাগত বলে অপমান করা হয়। আমাদের এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা কেন ঢুকব না? আমরা শিমুল হত্যার বিচার চাই। দাবি না মানলে আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।
ওমর ফারুক নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না তারা ক্যাম্পাসে ঢুকলে আমাদের বিভিন্নভাবে গালাগাল করা হয়। আমরা আজকের ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। সে সঙ্গে এ ঘটনা যেন আর না ঘটে সে দাবি জানাই।
স্থানীয়দের বিক্ষোভের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, যেহেতু একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তারা বিক্ষোভ করবে এটা স্বাভাবিক। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছি। এছাড়া আগামীকাল ক্যাম্পাসে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা আছে। আমরা বিষয়টা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা হয়তো পদক্ষেপ নেবে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে শিমুল শিহাব নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। তবে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনাকে বাইক দুর্ঘটনা বললে অভিহিত করেছে। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
শিমুল শিহাব রাজশাহী কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান গতকাল রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যাম্পাস থেকে রাত ১১টার দিকে একটি ছেলেকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তারা প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলে লুকাচ্ছিল। পরে জেরার মুখে মারামারি করে মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। তাকে ফিজিক্যাল এসালড ব্রডডেথ হিসেবে পেয়েছি। শরীরের বাইরের অংশে মেজর কোনো ক্ষতের দাগ পাওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব এবং দুই উপ-উপাচার্য। তারা শিমুলের রুহের মাগফিরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সে সঙ্গে ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক উল্লেখ করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন