রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় এখনো দোষীদের চিহ্নিত না করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) মাগরিবের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জোহা চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘আল কোরআনের অপমান, সইবে নারে মুসলমান’, ‘আল কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘আমরা সবাই রাসুল সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’, ‘শিবিরের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’- প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সমাবেশে শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, কোরআন আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। কোরআন পুড়িয়ে আমাদের হৃদয়ে যে আঘাত দেওয়া হয়েছে, সেটার আঘাত মৃত্যু দিয়েও দেওয়া যায় না। যারা চুপি চুপি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে, তারা আমাদের সামনে প্রকাশ্যে এসে কোরআন পোড়াক। তাহলে শুধু ছাত্রশিবির নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে। পবিত্র কোরআন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে আমরা আমাদের কোরআনের বিপ্লব ঘটাবো।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোরআন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি করে ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, গত ১২ জানুয়ারি কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের কলিজার স্পন্দন কোরআনে আগুন দিয়েছে। আমরা তাদেরকে বলে দিতে চাই, তোমরা ঘুঘু দেখেছো, ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি। কোরআন পোড়ানোর আগুনের স্ফুলিঙ্গে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিছুদিন আগে ইরানে কোরআন অবমাননার কারণে এক খ্রিস্টান পোপকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। যারা এই কোরআন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের জোহা চত্বরে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। এর জন্য যদি ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীকে আন্দোলনের মাঠে শহীদ হতে হয়, আমরা সেটার জন্যও প্রস্তুত।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ ফয়সাল। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বায়তুলমাল সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নওসাজ্জামান, এইচআরডি সম্পাদক সাহিদ ইমরান। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, মতিহার হল, মাদার বখ্শ হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলে কোরআন শরীফ পুড়িয়ে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। ঐদিন শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দেয়ালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোগো পদ্ম ফুলের ছবিও এঁকে রেখে যায় তারা। এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে এর আগেও মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং গণ কোরআন বিতরণ করেছে শিবির ও দাওয়াহ কমিউনিটি।
মন্তব্য করুন