জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলাপরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীর সনদ বাতিল, স্থায়ী বহিষ্কার এবং সনদ স্থগিতসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানানো হয়, আবাসিক হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৪ জনের সনদ বাতিল, ২ জনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শাস্তি পাওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহকে (যাযাবর নাঈম) (ফোকলোর বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার, সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান জয় মোড়ল (আইন ও বিচার বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার ও স্নাতকের সনদ বাতিল করা হয়েছে। সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক লোভন মোখলেছ (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে।
বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ানুল কবীর রাব্বি (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আবু রায়হান (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এবং সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) দুই বছর, বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেল (নাট্যকলা বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ), সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহ (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), নাঈমুল ইসলাম অনিক (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ), পবিত্র মণ্ডল (পপুলেশন সায়েন্স, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) ও আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে (চারুকলা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুল্লাহর (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ ও নয়ন হাসানের (ইএসই, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পূর্বের প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, সে তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং যারা হামলার স্বীকার হয়েছিল তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো শৃঙ্খলা বোর্ডে আলোচনার পর সিন্ডিকেটে অনুমোদন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো ধরনের অন্যায় কার্যক্রম সংঘটিত হলে, প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা বিধি মোতাবেক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
জানা যায়, গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি অগ্নি-বীণা হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালীন সংবাদ সংগ্রহের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ ও যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি আহসান হাবিব রিয়াদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর রাতেই তৎকালীন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে আহ্বায়ক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহকে সদস্য এবং প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মন্তব্য করুন