রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা পুনর্বহাল না হলে ভবিষ্যতে পরীক্ষা, পরিবহনসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কোটা পুনর্বহালের দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনকালে এ ঘোষণা দেন তারা।
এদিন সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রায় সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শুধু জরুরি পরিষেবা বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, পানি, পরিবহন ও নিরাপত্তা প্রহরী শাখায় কর্মরতরা দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল এবং বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ অফিস কক্ষের তালা খোলা হয়নি। কিছু কিছু কক্ষের দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায়নি। প্রশাসন ভবনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সনদ শাখা পুরোপুরি বন্ধ আছে। ফলে জরুরি কাজে মার্কশিট, সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে আসা শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, তারা সব প্রকার অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তারাও আন্দোলন করেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় তাদের সন্তানরা যে সুবিধা পেতেন, সেটি কোনো কোটা নয়, এটা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার। এ দাবিতেই তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার বহাল আছে। তারাও এই সুবিধা ফেরত চান। ন্যায্য দাবি আদায় না হলে আগামীতে পরীক্ষা, পরিবহনসহ জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন বক্তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির মাধ্যমে আমাদের এ সপ্তাহের কর্মসূচি শেষ হবে। রোববার (১৯ জানুয়ারি) কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেতারা আলোচনায় বসে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’
উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি রাবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটার হার পুনঃনির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসন সেই কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ২০ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও প্রায় দেড় মাস পর এ নতুন সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা সার্বিকভাবে বাতিলসহ তিন দাবিতে ২ জানুয়ারি সকাল থেকে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন তারা। এ সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলে প্রশাসন ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরেরদিন তারা দুই ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। গত ৮ জানুয়ারি এবং বুধবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
মন্তব্য করুন