রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আন্দোলন-ধর্মঘটে ‘কার্যত অচল’ রাবি, ব্যাহত শিক্ষার পরিবেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেই সঙ্গে তাদের দোসররাও ছেড়েছেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। যোগ দেয় নতুন প্রশাসন।

এরপর গত পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, ধর্মঘট এবং প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অস্থির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে পোষ্য কোটার পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন। আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট পদত্যাগ করেন তৎকালীন উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে গেল ৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। একে একে যোগ দেন দুই উপ-উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম এবং জুলাই অভ্যুত্থানেও এ প্রশাসনের অনেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

নতুন প্রশাসন আসার পর থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দাবিতে উত্তাল থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়। ভারত বাঁধ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি, সীমান্তে ভারতের আগ্রাসন, চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাবির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটা। গত ১৪ নভেম্বর পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া এই কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, কোটাকে লাল কার্ড প্রদর্শন, মানববন্ধন, কোটার প্রতীকী কবর দেন তারা। সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসন ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অনেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ফলে ১২ ঘণ্টা পর পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন উপাচার্য। এতে আবার বেঁকে বসেছেন কর্মচারী-কর্মকর্তারা। গত ৬ জানুয়ারি থেকে ধর্মঘট, অর্ধদিবস এবং পূর্ণদিবস কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এ সময় তারা পরীক্ষা এবং জরুরি সেবা ছাড়া বাকি সব শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম থেকে বিরতি দিয়েছেন।

এ ছাড়া গত ১২ জানুয়ারি রাবির কয়েকটি আবাসিক হলের মসজিদ থেকে পোড়ানো কোরআন শরীফ উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন এবং গণ-কোরআন তিলওয়াতের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ক্যাম্পাসে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবকিছু মিলিয়ে রাবির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এতে সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। গত ১৭ বছরের বঞ্চনাকে এসব আন্দোলনের কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। যে কোনো যৌক্তিক দাবি শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটি না করে তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিচ্ছে। যার ফলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার যে স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল তা অনেকাংশে বিঘ্নিত হচ্ছে বলেই মনে হয়। দাবি আদায়, আন্দোলনের পাশাপাশি আমাদের একাডেমিক গতিময়তার দিকটিও খেয়াল রাখতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও স্টুডেন্ট রাইটস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, জুলাই বিপ্লব এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে অনেক বিভাগ সেশনজটে পড়ে। সেটি কাটিয়ে উঠার আগেই আবার পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন শুরু হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রশাসনেরই এগিয়ে আসতে হবে।

পোষ্য কোটা নিয়ে আন্দোলনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, উপাচার্য স্যার পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। এ বিষয়ে আর উত্তেজনা সৃষ্টি না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যান্য সুবিধা দিয়েও এ সমস্যার সমাধান করা যাবে।

নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের একটি বৃহৎ দাবি পূর্ণ হয়েছে। এখন তাদের উচিত ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়া। তাদের দাবিগুলো এখন যৌক্তিক হলেও শিক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাবে। অন্যান্য সমস্যা দেখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে। শিক্ষার্থীদের উচিত এখন পড়াশোনা এবং গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া।

শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলেছে সেটি অবশ্যই যৌক্তিক। তবে অপর পক্ষ যে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার দাবি করছে সেটিও অযৌক্তিক না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত উভয়পক্ষকে নিয়ে বসা। সেখানে এপাশ এবং ওপাশ থেকে কিছু ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন দেশে একটা স্বৈরতন্ত্র চলেছে। ফলে অনেকে তাদের বিভিন্ন রকমের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলছে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিছুদিন পর এমনিতেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার যে স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে সেটি অস্বীকার করা যাবে না। যে কেউ তার দাবি পূরণের জন্য আন্দোলন করতে পারে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে আমি অনুরোধ করব যেন তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডগুলো বন্ধ না করে।

এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমরা এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা করিনি। পরবর্তীতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেটি সময় ঠিক করে দেবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে হতে পারে কাবাডি বিশ্বকাপ

ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহাকারীদের জন্য সুখবর

সংসদ সচিবালয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

আ.লীগ নেতার যোগসাজশে পাহাড় কেটে সাবাড় করলেন বিএনপি নেতা

ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা

গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক / বাংলাদেশের সব অংশীজনকে নিয়ে কাজ করবে চীন

বিপিএলে পারিশ্রমিক ইস্যুতে জরুরি মিটিংয়ে বসছে বিসিবি

বাতিল হতে পারে অস্কার অনুষ্ঠান!

আবাসন সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রীদের ৩ হাজার করে টাকা দিবে ঢাবি

রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আবারও কর্মবিরতি

১০

নিম্নমানের কাগজে ছাপার চেষ্টা, সরকার প্রেসের ৬০ হাজার বই জব্দ

১১

ফেসবুকে প্রেম, দেখা করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার

১২

রক্তপাত এড়াতে নিজেই ধরা দিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন

১৩

মাংস বিক্রির উদ্দেশে রাতের অন্ধকারে ঘোড়া জবাই, অতঃপর...

১৪

ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২০৮৫ মামলা

১৫

জামায়াতের আমিরের সঙ্গে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৬

সাড়ে ৬ হাজার টাকার জন্য হত্যা করা হয় হোসাইনকে

১৭

সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ভাতিজার হাতে চাচার মৃত্যু

১৮

সুপার ওভারে ইংল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ

১৯

ছাগলকাণ্ড : মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ কারাগারে

২০
X