ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। তবে বিভিন্ন মহলের দাবি, নির্বাচনের আগে এর গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারে ৯ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। এ সময় এক লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন খান।
শিবিরের এ সংস্কার প্রস্তাবনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ধারা ২(ক) সংস্কার করতে হবে, ডাকসুর ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য' ধারায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতাদর্শিক নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ স্বার্থরক্ষা ও অধিকার আদায়ের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
প্রস্তাবনায় ‘ডাকসুর কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা ও গণতন্ত্র চর্চা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের উল্লেখ থাকতে হবে’ উল্লেখ করা হয়। ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়- গঠনতন্ত্র ‘৩-কার্যাবলীতে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমির কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা পর্ষদ, বিদ্যমান প্রকল্প ও কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য যৌক্তিক পদের সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের প্রদান করা, বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জরিপ ডিজিটাল আউটরিচ, দৈবচয়ন প্রভৃতি নানা বিজ্ঞানসম্মত ও যৌক্তিক উপায়ে শিক্ষার্থীর মতামত গ্রহণ ও প্রকাশ করার কথা বলা হয়।
প্রস্তাবনায় ‘সংসদের অনির্বাচিত সভাপতি স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা সীমিত করতে হবে ও কার্যনির্বাহী পরিষদকে শক্তিশালী করতে হবে’ এমন দাবি জানায় ছাত্রশিবির। ডাকসুকে যুগোপযোগী ও শিক্ষার্থীবান্ধব করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু সম্পাদকীয় পদের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংযোজন করার দাবি জানায় সংগঠনটি। বর্তমান গণতন্ত্র অনুযায়ী ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক’ ভর্তির পরিবর্তে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক’-এর দাবি তোলেন তারা। এর ব্যাখ্যায় তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারীবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও জুলাই-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে দেশের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, মৌলিক মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন এই সম্পাদক।
এছাড়া তারা বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক’ পদের পরিবর্তে ‘পাঠাগার, পাঠ কক্ষ ও কমন রুম বিষয়ক সম্পাদক’ ও ‘কাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিন বিষয়ক সম্পাদক’-এর দাবি তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাবি শিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আশিক, সাবেক প্রচার সম্পাদক হোসাইন আহমাদ জোবায়ের, সাবেক সাহিত্য প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুর প্রমুখ।
মন্তব্য করুন