রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চারটি আবাসিক হলে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা, ‘আল কোরআনের অপমান, সইবে নারে মুসলমান, আল কুরআনে আগুন দাওনি, দিয়েছ মুসলিমদের কলিজায়, ছাই চাপা আগুন বুকে নিয়েই রুখে দাঁড়াব আমরা, জান দিব তাও কোরআনের অবমাননা সইব না’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেন ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য যারা চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা একত্রিত হয়েছি। কোরআন মাজিদ পৃথিবীর একমাত্র নির্ভুল পবিত্র গ্রন্থ। কোরআন মাজিদে আঘাত করে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোষর এবং আধিপত্য কায়েমকারীদের তাড়াতে চাই। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চায় তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দেব।
রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিঠু বলেন, সব দল-মতের বাইরে আমাদের একটাই পরিচয় আমরা মুসলমান। আর সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমাদের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে যে সম্প্রীতির বন্ধন সেটা যারা নষ্ট করার চেষ্টা করছেন তাদের হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আপনারা কোনোভাবেই সফল হবেন না। তাই আর যদি কোরআনের ওপর কোনো আঘাত আসে, কোনো রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়, একজন মুসলমান হিসেবে আমি সেটা শক্ত হাতে প্রতিহত করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, এক ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে নতুন পাঁয়তারা করছে একটি কুচক্রী মহল। আমি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ তারা ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেয়নি। তারা ভেবেছিল তাদের পরিকল্পনামাফিক শিক্ষার্থীরা একটা সাম্প্রদায়িক পাল্টা হামলা করবে। যাতে ক্যাম্পাসে একটা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের এই ফাঁদে পা না দিয়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার আল হাবিব। এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টটিউটের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, রোববার ভোর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী, শহীদ জিয়াউর রহমান ও মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অর্ধ-পোড়ানো কোরআন উদ্ধার করেন।
এ ছাড়া শহীদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদ থেকে কয়েকটি পাতা পোড়ানো অবস্থায় কোরআন উদ্ধার করে হল প্রশাসন। একই সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দেয়ালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোগো পদ্মফুলের ছবিও আঁকা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। এদিকে ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মন্তব্য করুন