বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার উপর গুলি করার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর শাখার প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট পাবনা শহরে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ করেন পাবনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। যেখানে প্রিন্সের পাশে তার সহকারী হিসেবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদ হোসেন রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৪ আগস্ট পাবনা শহরে আওয়ামী নেতাকর্মীদের গুলি করার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করছেন। গুলি করার সময় গোলাম ফারুক প্রিন্সের পেছনে পাবিপ্রবি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ আহমেদ রাসেল দৌড়াচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, কিছুদিন আগে আমাদের কাছে ৪ আগস্ট পাবনায় ছাত্র-জনতার উপর গুলির একটা ভিডিও আসে। ভিডিওটি অনেক যাচাই-বাছাই করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ আহমেদ রাসেল দাঁড়িয়ে আছেন আর পাবনার ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স শিক্ষার্থীদের মিছিলের উপর গুলি করছেন।
৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ না করলেও কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম একটি দপ্তরের প্রধান হিসেবে স্বপদে বহল থেকে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে আসছেন, যা আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের ও একই সঙ্গে সংশয়ের। তারা কাদের শেল্টারে এখনো ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে চলাফেরা করে আমরা বর্তমান প্রশাসনের কাছে এর জবাব চাই।
পাশাপাশি অতিদ্রুত সময়ে মধ্যে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তার যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার একটি ভিডিও ফুটেজে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে দেখা যায়। এ কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করি প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ওই কর্মকর্তারা বিচারের দাবিতে বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য কাছে যান। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমরা লিখিত অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণগুলো সংযুক্ত করে দাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাদের জন্য আচরণবিধি নেই। তাই আমরা চাইলেই হুট করে ব্যবস্থা নিতে পারব না।’
অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমরা তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িতদের কোনো ছাড় নয়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, ‘ঘটনার ওই দিন আমি অফিস করে শহরের দিকে যাই। তবে ওই ভিডিও বা ছবির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চাকরি করি, এখানে আমার নামে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা।’
মন্তব্য করুন