সম্প্রতি নিয়োগ হওয়া বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তিন সদস্যের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী। দাবি মানার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।
রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান।
ওই তিন সদস্য হলেন- ডা. শাহীনা সোবহান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এফ জাগরুল আহমেদ এবং মিজানুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক জালাল আহমদ বলেন, ২ জানুয়ারি পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের তিন দোসরকে পিএসসি সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ডা. শাহীনা সোবহানের বাবা সৈয়দ আব্দুস সোবহান ১৯৭৯ সালে জামালপুর ৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠিত হলে তিনি সম্পাকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর তিনি আত্মগোপন করেন। ১৯৭৬ সালের ৪ মার্চে তিনি গ্রেপ্তার হন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন ঢাকা মেডিকেলে পড়ার সময়। তিনি বিতর্কিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস সাহেবের স্ত্রী ড. বেলির সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এফ জাগরুল আহমেদ আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে আয়নাঘর মানে ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ছিলেন এবং তিনি নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগ করে অবসরে যান। ড. মো. মিজানুর বিসিএস ৮৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের সময়ে বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিয়াম ফাউন্ডেশনকে প্রশাসন ক্যাডারদের ‘কেন্দ্রবিন্দু’ ধরা হয়ে থাকে। উনিও আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন দূতাবাসে প্রাইজ পোস্টিং পেয়েছেন।
পিএসসিতে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীদের নিয়োগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জালাল বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শুরুটা ‘কোটা বিরোধিতা’-কে কেন্দ্র করেই হয়েছিল। আর কোটার ‘প্রয়োগ’ মেলে পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে। তাই পিএসসিতে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের তিন দোসরের নিয়োগ শহীদের আত্মার সাথে প্রতারণা। আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়োগ দিলে পিএসসি ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হবে।
বিতর্কিতদের কে বা কারা নিয়োগ দিচ্ছে এমন প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রশাসনে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে পতিত সরকারের দোসররা। তারাই প্রশাসনকে উল্টো পথে নিয়ে যাচ্ছে। সংস্কারের পথে বারবার বাধার সৃষ্টি করছে। বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন হাসান, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন মিয়া, নজরুল ইসলাম, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী রাখেশ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবু হানিফ আল ইমরান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন