রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন ও ধর্মঘটের পর এবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পাশে লিচু তলায় অবস্থান নিয়ে কর্মকর্তা, সহায়ক কর্মচারী, সাধারণ কর্মচারী, পরিবহন কর্মচারী সমিতি ব্যানারে এ কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এদিন জরুরি কাজ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রাখেন তারা।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সায়েন্স ল্যাবরেটরির উপরেজিস্ট্রার সৈয়দ মো. বখতিয়ার বলেন, উপাচার্য মুষ্ঠিমেয় কিছু ছাত্রদের দাবি ও কথার বিনিময়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বাতিল করেছেন। আমরা চাই না আমাদের আন্দোলন আরও বৃহত্তর হোক। আমরা চাই, আমাদের যে যথার্থ দাবি তা অনতিবিলম্বে ফিরিয়ে দেন। না হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিনকে দিন অচল হয়ে যাবে।
টেলিফোন দপ্তরের উপরেজিস্ট্রার আলহাজ মুজিবুর রহমান বলেন, পোষ্য কোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মকর্তা- কর্মচারীর প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা। বহু বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই সুবিধা আমরা পাচ্ছি। শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় বরং সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছে। তাই অতিদ্রুত আজকের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেন। নাহলে আগামীকাল থেকে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি গ্রহণ করব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মুক্তার হোসেন বলেন, জরুরি পরিষেবা হিসেবে শুধু বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, পরীক্ষা, পানি ও নিরাপত্তা প্রহরী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। তাছাড়া বাকি সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আজ পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করছেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১ জানুয়ারি) রাবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটার হার পুনঃনির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসন সেই কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ২০ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও প্রায় দেড় মাস পর এই নতুন সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা সার্বিকভাবে বাতিলসহ তিন দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন তারা। এ সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলে প্রশাসন ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন