জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদের পরিবার বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে একটি শহীদের তালিকা প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। তবে সাজিদের পরিবার কখনোই কোনোদলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত নন বলে তার পরিবার থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সোমবার (৭ জানুয়ারি) সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ১৪২ জন শহীদের নাম ছবিসহ প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকার ১২৯ নম্বরে সাজিদের ছবিসহ নাম লক্ষ্য করা যায় শুধু তাই নয় ১৩০ নম্বরেও মোক্তাদির রহমান নামে আরেক শহীদরের নামের সঙ্গে সাজিদের ছবি ব্যবহার করা হয়। এ তালিকাটি প্রকাশ হওয়ার পরই তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয় ক্যম্পাস জুড়ে।
গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুক জুড়ে ছিল সমালোচনার ঝড়।
সাজিদের পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, সাজিদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এমনকি সাজিদের পরিবারও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। এমনকি শহীদের তালিকা প্রস্তুতের আগে সাজিদের পরিবারের কারো সঙ্গে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানান সাজিদের বড় বোন মোসা. ফারজানা।
সাজিদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকার কথা জানিয়ে তার সহপাঠী মাহমুদুল হাসান ইমন বলেন, গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জুলাই আন্দোলনে বিএনপি দলীয় শহীদদের তালিকা প্রকাশ করেছেন। সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদের নামের পাশে ট্যাগ দেয়া হয়েছে ‘ছাত্র-পারিবারিকভাবে বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত’। বিএনপি মহাসচিবের পোস্টের সঙ্গে সঙ্গে সাজিদের পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সাজিদের সঙ্গে আমার সাত বছরের বন্ধুত্ব। সাজিদের পরিবার বলেন আর সাজিদ বলেন, কোনো ধরনের রাজনীতির আশপাশে ছেলেটা বা তার পরিবার ছিল না।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামসুন নাহার বলেন, আমাদের কাছে সাজিদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো একজন শিক্ষার্থী হিসেবে। তাছাড়া সাজিদ 'শহীদ' হয়েছে। ‘শহীদ’-এর চেয়ে আর কোনো বড় পরিচয় হতে পারে না। যেকোনো তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল।
এ বিষয়ে সাজিদের বাবা জিয়াউল হক বলেন, সাজিদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমাদের পরিবারের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না। আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের সঙ্গে তালিকা তৈরির বিষয়েও কেউ যোগাযোগ করেনি।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শহীদ ইকরামুল হক সাজিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা চলাকালে ৪ আগস্ট মিরপুর এলাকায় গুলিবদ্ধি হন ইকরামুল হক সাজিদ। তার মাথার পেছন থেকে বুলেটটি চোখের পেছনে এসে আটকে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট সাজিদ মারা যান।
মন্তব্য করুন