ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাসুদ রানা নামে এক শিক্ষার্থীর মাথায় ছাদের পলেস্তারা পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জেরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার ও মুহসীন হলে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন হলটির শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বরাবর স্মারকলিপিও দেন তারা।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে এ স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এ ছাড়া, উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মুহসীন হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি পুরোনো ও ঐতিহাসিক একটি হল, যার প্রতিষ্ঠা ১৯৬৭ সালে। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় মুহসীন হল এতে অবস্থানকারী আবাসিক ছাত্রদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সোমবার রাত দেড়টায় ২০৪ নম্বর রুমের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী মাসুদ হাসানের মাথায় রুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। খসে পড়া পলেস্তারার আঘাতে তার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করলে তাকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। মশারি টানানো থাকায় গুরুতর কোনো কিছু হওয়ার হাত থেকে মাসুদ হাসান বেঁচে গেলেও এমন ঘটনা মুহসীন হলে নতুন নয়। ২০২৩ সালে সংগঠিত ভূমিকম্পে মুহসীন হলের অধিকাংশ রুমের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়েছিল। সে সময়ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তারপর খসে পড়া পলেস্তারার জায়গায় নতুন করে আস্তরণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অল্প কিছুদিন পর থেকেই সেগুলো আবারও খসে পড়তে শুরু করে।
তারা বলেন, প্রায় নিয়মিতই বিভিন্ন রুমের পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা অসংখ্যবার দাবি জানিয়েছি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের একটি ভবনের ছাদ ধসের ঘটনায় ৩৯ মেধাবী শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও অতিথি নিহত হয়েছিল, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে। অতিদ্রুত নতুন ভবন তৈরি করে শিক্ষার্থীদের সেখানে সরিয়ে না নিলে মুহসীন হলে হয়তো অক্টোবরের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে নতুন ভবন তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সুস্পষ্ট সময়সীমাসহ এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে হবে এবং আগামী ১ মাসের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে। নতুন ভবন হওয়ার আগ পর্যন্ত হলে শিক্ষার্থী এলটমেন্ট কমিয়ে দিতে হবে এবং নতুন ভবন হওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর, কোষাধ্যক্ষ মহোদয়ের দপ্তর, এস্টেট অফিস ও হল প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে আগামী তিন দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাত দেড়টায় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ২০৪নং কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের (২০১৮-১৯ সেশন) মাসুদ রানা নামে এক শিক্ষার্থীর মাথায় পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। এতে তার মাথা ফেটে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ঘটনার পর রাত আড়াইটার দিকে নিরাপদ আবাসিক হল স্থাপনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান করেও স্লোগান দেন তারা।
মন্তব্য করুন