চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মী আটক হয়েছেন। আটক হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী সাজ্জাদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। আটকের সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে?’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা এ ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সোমবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তাকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) কাউসার। তিনি বলেন, আমাদের কাছে ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তাকে আদালতে চালান করে দেব।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চবির শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা জানান, সাজ্জাদ হোসেন নিজ এলাকার ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও জুলাই আন্দোলনের সময় সে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিত। গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে সে জড়িত ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোনো ফ্যাসিস্টের দোসরদের ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। সে আজ ছয় নম্বর পরীক্ষা দিতে এসেছে, কীভাবে একজন হত্যাকারী ইতিপূর্বে পাঁচটি পরীক্ষা দিয়েছে? আমরা এ হত্যাকারীর ছাত্রত্ব বাতিল চাই।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হাজারী বলেন, ‘সাজ্জাদ জুলাই আন্দোলন প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। অনলাইনের মাধ্যমে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছে। আমরা এই হামলাকারীকে আর চবি ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাহসান হাবিব বলেন, ‘সাজ্জাদ হোসেন নামের ছাত্রলীগ নেতা আমার ডিপার্টমেন্টের ছোট ভাই হৃদয় তরুয়াকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। এমন সন্ত্রাসীকে ক্যাম্পাসে দেখে আমরা বিস্মিত। এদের এখনো বিচার না হওয়া প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রমাণ করে।’
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব মাহমুদ রুমী বলেন, ‘আমরা তার ফোন চেক করে জানতে পারি যে, সে এখনো চারটি ফেসবুক আইডি দিয়ে হুমকি এবং উগ্রবাদী প্রচারণা চালিয়ে আসছে। হতে পারে চবিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে গুপ্ত হামলা হয়েছে তার সঙ্গে এরাই জড়িত।’
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবীর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরা তার পরীক্ষার সুযোগ করে দেই। আমরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি। যে কেউ যে কোনো আদর্শ ধারণ করতে পারে। তার বিরুদ্ধে লিখিত নির্দেশনা থাকলে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতাম না।’
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক ছাত্রকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে। পরে তারা প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। আমরা পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাকে হস্তান্তর করেছি এবং প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।’
মন্তব্য করুন