জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রলীগের ১৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ বহিষ্কারের জন্য আগামী সিন্ডিকেটে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় শৃঙ্খলা উপকমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. শওকাত আলী।
ভিসি বলেন, কোটা আন্দোলনে হামলায় জড়িত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ জনকে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার ও ২৩ জনকে এক সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। আত্মসমর্থনের প্রেক্ষিতে তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে একজন শিক্ষার্থীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রলীগের ১৫ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নিপীড়নের দায়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া হামলায় জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২০১৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেট সমর্থন দিয়েছে আগামী সিন্ডিকেট সভায় তাদের পূর্ণাঙ্গ বহিষ্কারের বিষয়টি তোলা হবে।
ভিসি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এজন্য শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মিটিং করা হয়েছে। তাদের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য নীতিমালা এই সিন্ডিকেট অনুমোদন করেছে। পরবর্তীতে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের তোলা দাবি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে শৃঙ্খলা বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ও জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নে জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত এবং শাস্তির ধরন নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমানকে সদস্যসচিব ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক, সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি।
মন্তব্য করুন