পোষ্য কোটা ইস্যুতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইসিটি সেন্টারের পরিচালক ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম। শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।
পরে এদিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কালবেলাকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
নিজের টাইমলাইনে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, বিবেকের তাড়নায় দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত ছিলাম। সর্বদাই আমি নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি কখনোই পদলোভী নই। ভিসি স্যারের একান্ত ইচ্ছায় আমাকে রাবির আইসিটি সেন্টারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাও ভেবেচিন্তে, অনেক দিন পর।
তিনি আরও লেখেন, পোষ্যকোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল রাবিতে যা ঘটে গেল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দুই শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে সালাউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে বহিরাগতদের দ্বারা টানা ১২ ঘণ্টা খাঁচায় আবদ্ধ করে জিম্মি করে রাখা হলো। যে কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবি মানতে বাধ্য করা হলো প্রশাসনের একজন হিসেবে এই অপমান-অপদস্তকে আমি মেনে নিতে পারছি না।
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক আরও লেখেন, আমি এর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে অফিসিয়ালি আমার পদত্যাগপত্র প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
পোষ্য কোটা আন্দোলনকারীদের বিচার চেয়ে তিনি পোস্টে লেখেন, গত দুই মাস যাবত আম্মারের মতো গুটিকয়েক ছাত্র অব্যাহতভাবে অছাত্রসুলভ রাবির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের ফ্যামিলি নিয়ে অশালীন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও কর্মসূচি পালন করে আসছে তা কোনোক্রমেই মেনে নেওয়ার মতো না। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং এর ন্যায্যবিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘কোটার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তাদের সঙ্গে ছিলাম। কোটা উঠে যাক এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। প্রশাসন চাইলেই কোনো একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়। কিন্তু প্রশাসনকে যেভাবে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে টানা ১২ ঘণ্টা জিম্মি করে রেখে দাবি আদায় করা হলো। বহিরাগত লোক নিয়ে এসে মব তৈরি করে দাবি আদায়ের যে কালচার তৈরি হয়েছে সেটি আমি মানতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদত্যাগ করার পর গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে থাকার জন্য বলেছে। আমি তাদের বলেছি, এই প্রশাসন মব কালচার মোকাবিলা করতে পারবে না। মোকাবিলা যদি করতে না পারে তবে আমি অন্তত এই প্রশাসনে থাকতে চাই না। গত প্রায় দুই মাস ধরে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে ঘিরে যেসব অশালীন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে এবং গালিগালাজ করা হচ্ছে এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। একটা চরম ফ্যাসিবাদী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এগুলো ঠিক করতে না পারলে আমি আমার জায়গা থেকে সরে আসব না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবন তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্যসহ অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন তিনি। পরে ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত হন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মন্তব্য করুন