রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় সকল ধরনের পোষ্য কোটা বাতিলসহ তিন দাবিতে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন তারা। দাবি মেনে না নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অন্য দুইটি দাবি হলো ফ্যাসিস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুইজন ফ্যাসিবাদী শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে উন্মুক্ত স্থানে জবাবদিহিতা ও ব্যাখ্যা করতে হবে।
এর আগে সকাল পৌনে নয়টা থেকে শিক্ষার্থীর প্রশাসন ভবন থেকে সবাইকে বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বের হয়ে গেলেও অনেকেই বের হননি। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। অনেকে আবার ভেতরে প্রবেশই করেননি। এ ছাড়া আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসে মাইক নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘পোষ্য কোটা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাচতে চাই’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসঙ্গে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও পোষ্য কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘পোষ্য কোটার বিষয়ে বুধবার (০১ জানুয়ারি) প্রশাসন নতুন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আমরা তো ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই আসতে চাই। কিন্তু আপনারাই ভর্তি পরীক্ষার আগেই সিট রিজার্ভ করছেন। তাহলে অন্যায় দাবি কোনটা? অবিলম্বে পোষ্য কোটা বাতিল করে মেধাবীদের মুক্তি দিতে হবে। নতুবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন বন্ধ থাকবে।’
আন্দোলনকারী আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম সজীব বলেন, ‘আমাদের জুলাইয়ের মূল ম্যান্ডেট ছিল কোটা বাতিল। পরে সরকারের বল প্রয়োগে তাদেরই পতন হয়েছে। এর পরেই নতুন প্রশাসন ন্যায্যতার ভিত্তিতেই চেয়ারে বসেছে। কিন্তু চার মাস পেরোতেই আমাদের আশা ব্যহত হয়েছে, কোটার বিরুদ্ধে আবার স্লোগান দিতে হচ্ছে। এতে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়কে আজকের মধ্যেই অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল করে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন,‘আমি এখনও দপ্তরে আসিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে শুধুমাত্র এ বছরের জন্য ১ শতাংশ কোটা বহাল রেখেছি। এর পরিমাণ আগামীতে বাড়ার সম্ভাবনা নেই বরং এটাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোটা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেন শুধু পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে দাবি তুলেছে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় এবারের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা বাতিল করে শুধু সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে রাত ৮টায় সংবাদ সম্মেলন করে সকাল ১০ ভেতর পোষ্যকোটা বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তির সময় বেধে দেন শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা।
মন্তব্য করুন