বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিন পর সন্ধ্যান মিলেছে। গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে নিখোঁজ হওয়া শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের এই আবাসিক শিক্ষার্থী মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলে প্রবেশ করেন। পরে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) খালেদ হাসানকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এ সময় তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন উপাচার্য। তিনি খালেদ হাসানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ফারুক শাহ, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হামজা ও খালেদ হাসানের পিতাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে খালেদকে গুম করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সে (খালেদ) ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। আমি তার সাথে একান্তে কথা বলতে চাইলে সে আমাকে তার গুম হওয়ার ঘটনা জানায়। খালেদের ভাষ্যমতে, শুক্রবার বিকেলের দিকে টিএসসি থেকে রিকশায় করে দোয়েল চত্বরের দিকে যাবার সময় রিকশাতেই অজ্ঞাত কারণে সে জ্ঞান হারায়। পরবর্তীতে সে যখন জ্ঞান ফিরে পায় সে নিজেকে সুনামগঞ্জের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে মাইক্রোবাসে দেখতে পায়। এ সময় তার সাথে আরও ২-৩ জন ছিল। পরবর্তীতে সে আবারও জ্ঞান হারায়।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার যখন খালেদ জ্ঞান ফিরে পায় তখন সে নিজেকে পঞ্চগড়ের কোনো একটা জায়গায় দেখতে পায়। তখনো মাইক্রোবাস চলমান ছিল। তৃতীয়বার আজকে যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন সে নিজেকে বরিশালের এক রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে কেউ একজন গাড়িতে তুলে দিলে সে ঢাকা পৌঁছে হলে ফিরে আসে। খালেদের মানসিক অবস্থা ভালো না। কাউকে কিছু বলতে পারছে না। আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে এসেছি।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ফারুক শাহ বলেন, আমি খালেদের সাথে কথা বলেছি সে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু ভয়ে বলতে পারছে না। তাকে খুব দুর্বল দেখাচ্ছিল। পরে আমি ডাক্তার নিয়ে আসলে তার ব্লাড প্রেশার বেড়েছে বলে ডাক্তার জানায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হলে সে সবাইকে ঘটনা বিস্তারিত বলতে পারবে হয়তো।
প্রসঙ্গত, খালেদ হাসান গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ বলে জানিয়েছিলেন তার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা। সে সময় সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাতে খালেদ তার বন্ধু ওমর ফারুকসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। পরদিন শুক্রবার ভোর ৫টার সময় তিনি পূর্বাচল জলসিঁড়ি আবাসিক এলাকায় ২১ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেন। ম্যারাথন শেষে বন্ধুকে ফার্মগেট এলাকায় নামিয়ে দিয়ে খালেদ সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে নিজের মোটরসাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। হলে থাকা সিসি ক্যামেরায় তা দেখা গেছে। এতে আরও দেখা যায়, খালেদ গত শুক্রবার সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে সর্বশেষ তার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন, যিনি ঢাকার বাইরে আছেন। তার কক্ষের দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে বন্ধুরা তালা খুলে কক্ষে তার ব্যবহৃত একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন পান।
মন্তব্য করুন