‘ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, জামায়াত-শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল। এবার সেই পেজের এডমিনের পরিচয় প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল বাকি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আব্দুল্লাহিল বাকি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদ বিতর্কিত সেই পেজের এডমিন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করে তিনি লেখেন, ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা নামে একটি পেজ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নানা সময়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার, ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট, কার্টুন, ছবি বিকৃতিসহ নানা কিছু পোস্ট করে আসছে। পেজটি থেকে কিছুদিন আগে এক উপদেষ্টারও ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপানো হয় দাঁড়ি-টুপি অ্যাড করে কটাক্ষ করে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই পোস্ট পেজটি থেকে সরানো হয়। পেজটির পেছনে ছাত্রদলের লোকজন কাজ করছে বলে সবাই বলার পরেও ছাত্রদলের লোকজন এটাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু পেজটি সত্যিই ছাত্রদলের লোকজনই চালায়।
তিনি লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদ পেজটির এডমিন। আবদুল গনি নামের আরেকটি আইডি এই পেজে এডমিন হিসেবে আছে। ওই আইডিটিতে মাত্র একজন ফ্রেন্ড এবং আইডিটি ঢাবির গ্রুপেও অ্যাড আছে। পেজটিতে মোট দুইটা এডমিন আছে ।
তিনি আরও লেখেন, এই কাজগুলো আগে করতো নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোকজন। প্রকৃতি সম্ভবত কোনো শূন্যস্থান রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষের নামে বিষোদগার ছড়ানো ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িতরা ছাত্রদলের পোস্টেড নেতা। অবাক করা বিষয় হল- এই টাইপের আরও কিছু পেজ আছে। একটার সঙ্গে আরেকটা কানেক্টেড। সময়মতো সবকিছুই সামনে আনা হবে।
নাবিলা তালুকদার নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল নামক পেজটি থেকে ক্রমাগতভাবে আক্রমণাত্মক অহেতুক ট্যাগিং করা এবং উক্ত ট্যাগিং কালচারের মাধ্যমে মানুষকে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হতো। কিছুদিন আগে এ হেনস্থার শিকার হয় আমার ডিপার্টমেন্টের বন্ধু কাজী কবিরুল ইসলাম। এরকম অহেতুক ট্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এদিকে, সমালোচনার মুখে ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা পেজটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও পূর্বের কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট কালবেলার হাতে এসেছে। এর মধ্যকার একটি পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের মাথায় মহিষের শিং বসিয়ে লেখা হয়, ‘হাতমে গাঞ্জা, কাঁধে কাঁধ লড়কে ল্যাঙে পালংবাদ’। অন্য আরেকটি পোস্টে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে এডিট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিও প্রচার করা হয়।
কীভাবে এই পেজটির হিডেন এডমিনদের পরিচয় জানা গেল এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল্লাহিল বাকি বলেন, আমরা একটি আইটি এক্সপার্ট ফার্মের সহযোগিতায় এডমিনদের পরিচয় শনাক্ত করেছি, যারা মেটার ডেটা নিয়ে কাজ করেন। তবে প্রাইভেসি পলিসির কারণে ওই ফার্মের নাম প্রকাশ করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে একটা পেজ থেকে বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, এটা কারও থেকেই আমরা প্রত্যাশা করি না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তানভীর আল হাদি মায়েদের কাছে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তিনি আব্দুল্লাহ হিল বাকীকে ‘সাবেক শিবিরকর্মী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, একজন সাবেক শিবিরকর্মী পোস্ট করেছেন আমি নাকি ওই পেজটা চালাই। কিন্তু এ পেইজের সঙ্গে আমি কখনও কাজ করিনি, এমনকি আমি কোন পেজ বা আইডি চালাই না। মামলা-জিডি করে এ সমস্যার সমাধান হবে না আমি জানি। এমনটা হতে পারে যে, আমার নামে একটি আইডি খুলে এডমিন করে আইডিটা ডিএক্টিভেটেড (নিষ্ক্রিয়) করে রাখা হইছে। সার্চ করে আমার নামে একটি আইডিই পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন