তালহা হাসান, হাবিপ্রবি
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ছত্রাক প্রয়োগে টমেটো চাষ, ব্যাপক সাফল্য

রাসায়নিকের বদলে ছত্রাক প্রয়োগে টমেটো চাষ। ছবি : কালবেলা
রাসায়নিকের বদলে ছত্রাক প্রয়োগে টমেটো চাষ। ছবি : কালবেলা

পাশাপাশি কয়েকটি বেডে একই সময়ে রোপণ করা হয়েছে অসংখ্য টমেটো গাছের চারা। তবে একসঙ্গে রোপণ করা হলেও সব গাছের বৃদ্ধি সমান নয়। কিছু গাছ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠছে দ্রুত এবং কিছু গাছ ধীরগতিতে। অথচ দ্রুত বেড়ে উঠা গাছের চারাগুলোতে প্রয়োগ করা হয়নি কোনোরকম রাসায়নিক সার। রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সারের প্রয়োগে কীভাবে ফলন বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়েই গবেষণা করছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ড. মহিদুল হাসান এবং তার পিএইচডি শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম।

কিছু বেডের চারাতে তারা প্রয়োগ করেছেন দোকান থেকে সংগ্রহ করা রাসায়নিক সার এবং কিছু বেডে প্রয়োগ করেছেন নিজেদের ব্যবস্থাপনায় মাটি থেকে উৎপাদিত উপকারী ছত্রাক ট্রাইকোডার্মা দিয়ে তৈরি করা বায়োফানজিসাইড। এতে যা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, একসঙ্গে রোপণ করা হলেও বায়োফানজিসাইড প্রয়োগ করা চারাগুলোর বৃদ্ধি হচ্ছে অন্য চারাগুলোর তুলনায় অনেক দ্রুত। এখন তারা মনে করছেন এসব গাছে ফুল এবং টমেটো উৎপাদনও হবে অন্য গাছগুলোর তুলনায় বেশি এবং দ্রুত। এরই মধ্যে এর আগের বছর এ গবেষণায় সফলও হয়েছেন তারা। এবার গাছের বৃদ্ধি এবং টমেটো উৎপাদনের পাশাপাশি বায়োফানজিসাইড প্রয়োগ করে উৎপাদিত চারার রোগ-বালাই কমানোর ক্ষেত্রেও জোর দিচ্ছেন তারা।

রাসায়নিকের বদলে ছত্রাক প্রয়োগে টমেটো চাষ করার বিষয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য হলো বায়োফানজিসাইড কৃষকের মাঝে পৌঁছে দেওয়া। এ উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের ল্যাবে বায়োফানজিসাইড তৈরি করেছি এবং তা মাঠপর্যায়ে ব্যবহার করেছি, পাশাপাশি কিছু বেডে বাজারে প্রচলিত রাসায়নিকও ব্যবহার করেছি। আমাদের উৎপাদিত বায়োফানজিসাইড যে বেডগুলোতে আমরা প্রয়োগ করেছি, সেগুলোতে টমেটো গাছের চারার বৃদ্ধির হার, শাখা-প্রশাখার সংখ্যা অন্যান্য বেডের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া এই বেডের চারাগুলোতে রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আমরা আশা করছি এসব গাছে ফুল, ফল এবং ফলনও অন্য গাছের তুলনায় অনেক বেশি হবে। আমাদের যে উদ্দেশ্য কৃষকের মাঝে বয়োফানজিসাইড পৌঁছে দেওয়া। আমরা তা পারব বলে আশা করছি।

কৃষকের মাঝে রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবণতা কমিয়ে এনে জৈব সার ব্যবহারের প্রবণতা তৈরির জন্য এ গবেষণা করা হচ্ছে বলে জানান গবেষক ড. মহিদুল হাসান। তিনি বলেন, কৃষকরা যে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন তার কারণে আমাদের কৃষিতে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মাটির অনেক উপকারী অণুজীব নষ্ট হয়ে যায়, যা উর্বরতা অনেকটাই কমিয়ে ফেলে। তা ছাড়া অতিমাত্রায় রাসায়নিক প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদিত শাকসবজি খাওয়ার কারণে আমাদের স্বাস্থ্যগত একটা ঝুঁকিও থাকে। এসব চিন্তা করে কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেই আমরা এ গবেষণা শুরু করেছি।

এ সময়, গত বছরের পর এবারও এ গবেষণায় সফল হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাজারে প্রচলিত রাসায়নিকের চেয়ে কমদামে জৈব ছত্রাকনাশক তৈরিই আমাদের উদ্দেশ্য। বহুল প্রচলিত যে ট্রাইকোডার্মা ছত্রাক আছে, তা ব্যবহার করে কম দামে, সহজ উপায়ে কোনো ফর্মুলেশন তৈরি করা যায় কি না, এ উদ্দেশ্যই আমরা কয়েকবছর আগে আমাদের গবেষণা শুরু করি। গত বছর আমাদের তৈরি করা ফর্মুলেশন টমেটো গাছে প্রয়োগ করে গাছের নেতিয়ে পড়া রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম, পাশাপাশি রাসায়নিক প্রয়োগ করা অন্যান্য গাছের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ফলন আমরা পেয়েছিলাম। এবারও আমাদের গবেষণার ফল ইতিবাচক। আমরা আশা করছি শিগগির মাঠপর্যায়ের কৃষকদের মাঝে আমরা এই জৈব ছত্রাকনাশক পৌঁছে দিতে পারব।

এবার গবেষণার অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারেও এই জৈব ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার এইচকে খামারের স্বত্বাধিকারী আজাহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার খামারেও এই সার পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। ব্রকলিতে আমরা রাসায়নিক এবং হাবিপ্রবির উৎপাদিত জৈব ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেছি। এক্ষেত্রে দেখা গেছে রাসায়নিক প্রয়োগে উৎপাদিত ব্রকলির চেয়ে জৈবসার প্রয়োগে উৎপাদিত ব্রকলির বৃদ্ধি অনেক দ্রুত হচ্ছে। আমার খামারে মাঠপর্যায়ে এই সার প্রয়োগ করে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছি।

পরীক্ষামূলকভাবে চলা এ গবেষণা এবারও সফলভাবে শেষ করে কৃষকদের মাঝেও এই বায়োফানজিসাইড খুব দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে এমনটাই মনে করছেন গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রানআউট বিতর্কের পর দুর্দান্ত ইনিংসে ম্যাচসেরা জাকের

শুভ মুক্তি / ঢাকায় ‘প্রিয় মালতী’, কলকাতায় ‘খাদান’

আদালত চত্বরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার সাজু বৈদ্য রিমান্ডে

অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পেলেন ১৯ বছরের কনস্টাস

শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে হিরো আলমের টিকটক, সমালোচনার ঝড়

সিলেটে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে প্রাইভেটকারের ধাক্কা, ছাত্রদলের ২ নেতা নিহত

আমরা সংবাদের মাধ্যমে ইসলাম ফোবিয়া মোকাবিলা করব : মাহমুদুর রহমান

রোদের ঝলকানিতে তেঁতুলিয়ায় কমছে শীতের তীব্রতা

উত্তরায় রেস্টুরেন্টে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

দিনাজপুরে ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

১০

জমে উঠেছে জামাই মেলা

১১

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ইস্যু

১২

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব : মাহমুদুর রহমান

১৩

ওসিকে ঘুষ দেওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

১৪

উইন্ডিজদের ধবলধোলাই করে যা বললেন অধিনায়ক লিটন

১৫

তদন্তে উঠে এল ভারতের সাবেক সেনাপ্রধানের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ

১৬

বাংলাদেশকে ৬৮৫ ভারতীয় বিশিষ্ট নাগরিকের খোলা চিঠি

১৭

হিমশীতল বাতাসে কাবু দিনাজপুরের মানুষ

১৮

সিরিয়ায় নতুন যুগের সূচনা, গঠন হচ্ছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল

১৯

বিএনপির কর্মীকে কুপিয়ে জখম, আ.লীগের ১১ নেতার বাড়িতে আগুন

২০
X