বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে হট্টগোল করেছে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বই দেখে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিও জানান তারা।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) তিতুমীর কলেজে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে খাবার বিতরণ পর্ব শুরু হওয়ার আগেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কলেজ মিলনায়তনের সামনে এসে রাজনৈতিক স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর তারা দলবেঁধে মিলনায়তনের ভেতরে ঢুকে স্লোগান দেন। ফলে খাবার বিতরণ পর্ব সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি। হট্টগোলের কারণে অনেক শিক্ষক মিলনায়তন ত্যাগ করেন। এরপর ভিড় ঠেলে শিক্ষার্থীরাও মিলনায়তন ছেড়ে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, কিছুক্ষণ পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুর রহমান এমদাদ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের রুম থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার অর্ধশতাধিক বই এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ছবি উদ্ধার করে। আমাদের কলেজে একটি কর্মসূচি চলাকালে ঘটনাটি শুনে আমরাও অধ্যক্ষের রুমে গিয়ে ওইসব বই ও ছবি দেখতে পাই। এতে স্পষ্ট হয় যে অধ্যক্ষ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। তার টেবিলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির ছবিও পাওয়া যায়। ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানায়।
সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, আমরা জানতে পারি যে অধ্যক্ষের রুমে শেখ হাসিনা ও তার বাবা শেখ মুজিবের বই এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ছবি পাওয়া গেছে। অথচ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ জাতীয় নেতাদের কোনো ছবি তার রুমে নেই। তিনি ভুল সংশোধন না করলে, আমরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করব।
হট্টগোলের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শিপ্রা রানী মন্ডল বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই। আমি মেধার জোরে অধ্যক্ষ হয়েছি, কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নয়। আমি কখনো কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা দেইনি, ভবিষ্যতেও দেব না। আমার বিরুদ্ধে ওদের অভিযোগ কী? সেটা স্পষ্ট করে বলুক।
অধ্যক্ষ বলেন ওরা হইচই করতে করতে রুমে ঢুকে কলেজের পুরাতন অ্যালবাম বের করে আমার সামনে রেখে ছবি তুলেছে। আগের অধ্যক্ষ কী করেছেন, তার দায় আমি নেব না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের (ছাত্রদল) দাওয়াত না দেওয়ার কারণে তারা অধ্যক্ষের রুমে আসে। অধ্যক্ষের টেবিলের ওপর কোনো শেখ মুজিবের ছবি ছিল না। তবে তাদের কয়েকজন নেতাকর্মী রুমের পুরাতন আলমারি থেকে শেখ মুজিবের কিছু বই এবং বিগত সরকারের আমলের কিছু ছবি বের করে টেবিলের ওপর রাখে। তিনি আরও বলেন, পুরাতন আলমারিগুলো কলেজের আর্কাইভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে কলেজের পুরাতন সবকিছু সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
মন্তব্য করুন