রাতের আঁধারে ছাত্রলীগের হামলা, দিনের আলোতে পুলিশের গুলিবর্ষণ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী কেউই তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। বর্বর সে হামলার পেরিয়ে গেছে ১২৭ দিন। এখনো সেসব মুহূর্তের ভয়াবহতায় আতকে ওঠেন ভুক্তভোগীরা। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কিংবা বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে প্রশাসনের গড়িমসির সুযোগ নিয়ে হামলায় জড়িতরা ক্যাম্পাসে ফিরছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে ক্ষোভে ফুসছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে হামলায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাবি ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে রেজিস্ট্রার ভবন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করার মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়।
মানববন্ধনে জুলাই বিপ্লবে আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছিল সেখানে আমি নিজে একজন আহত। আমার শরীরে এখনো অনেক স্প্লিন্টার রয়েছে যা অপারেশন করেও বের করা সম্ভব হয়নি। আজকে ৪ মাস হয়ে গেলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ আমরা ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট পরবর্তী আমরা এক স্বাধীন দেশ পাব এবং যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৪ মাস হয়ে গেলেও তাদের গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, প্রশাসন থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি আমরা দেখতে পাচ্ছি হামলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অনেক সন্ত্রাসী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্লাস করতেছে।’
ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের উচিত ছিল নিজ দায়িত্বে দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার করা। অথচ প্রশাসনের অবহেলায় আজ হামলাকারীরা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখায় আমরা এখনো বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যাইনি। আমরা চাই হামলায় জড়িতদের ও মদদ দেওয়া শিক্ষকদেরও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। জুলাই বিপ্লবের সন্ত্রাসীদের দ্রুত পুলিশে সোপর্দ করে বিচার নিশ্চিত না করলে আগামীতে তারা গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের ওপর হামলা চালাবে।’
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের চার মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি। আগামী সাত দিনের মধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা হামলাকারীদের সঙ্গে একই ক্লাসে বসে ক্লাস করতে চাই না। বিচার না করলে প্রশাসনের পরিণতি ভালো হবে না।
তবে প্রশাসনের গড়িমসির বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, বিগত প্রশাসন হামলার বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি করেনি। কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও জোগাড় করেনি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সকল কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছে। এজন্য তদন্ত কমিটির কাজ কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া হামলায় এতো বেশি সংখ্যক মানুষ জড়িত যে তাদের বিষয়ে সকল প্রমাণ জোগাড় করা ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়ে এটির কার্যক্রম শেষ হবে। এরপর রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ তৎপরতা চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন