রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটাকে ‘লাল কার্ড’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ আহ্বান জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ভার্চুয়ালি) অথবা সশরীরে উপস্থিত হয়ে কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের সকল আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে রাত সাড়ে ৯টার দিকে একই স্থানে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এর আগে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভে অংশ নেন আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘জনে জনে খবর দে, পোষ্য কোটার কবর দে’, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসাথে’, ‘আপোষ না মৃত্যু, মৃত্যু মৃত্যু, ‘তুমি কে? আমি কে? মেধাবী মেধাবী’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, কোটা বাংলাদেশে একটা মীমাংসিত ইস্যু। নতুন করে যারা কোটাকে প্রতিস্থাপন করতে চাচ্ছেন তাদেরকে উৎখাত করা হবে। হাসিনা যে পথে পালিয়েছে তারাও সে পথে পালাতে বাধ্য হবে। যেখানে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত নম্বর পেয়েও চান্স পায় না, পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থীরা ফেল করেও ভালো সাবজেক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পরে বাবার জোরে চাকরিও পেয়ে যায়। এটা তেলা মাথায় তেল দেওয়ার মত একটা বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের যে কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি সেখানে কোনো প্রকার পোষ্য কোটা প্রথা থাকবে না। কোনো অমেধাবী-অযোগ্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না। তাই আমরা পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন করবো। লাল কার্ড প্রদর্শনের সময় পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সমাবেশে সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের কথা বলি নাই, আমরা সকল ধরনের কোটার যৌক্তিক সমাধানের কথা বলেছি। জুলাই বিপ্লব হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও জুলাই বিপ্লবের ম্যান্ডেট ধারণ করে না। বিগত বছরগুলোর মতো স্বেচ্ছাচারিতা আর চলতে দেওয়া হবে না। পোষ্য কোটার কবর রচনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হবে। এসময় পোষ্য কোটার যোক্তিকতা দেখিয়ে আগামী সোমবার মুক্তমঞ্চে শিক্ষকদের বিতর্কে আসার আহ্বানও করেন তিনি।
বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর রাবির ভর্তি পরীক্ষায় তিন শতাংশ পোষ্য কোটা রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন রাতেই এই কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে সভাপতি করে ২০ সদস্যের কোটা পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। তবে এ কমিটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কার্যকারী কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার পরও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না আসায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন