সেন্টমার্টিন দ্বীপে (নারিকেল জিঞ্জিরা) যাতায়াত ও অবস্থানের ওদসব ধরনের সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি প্ল্যাটফর্ম।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এ এইচ ফাইম বলেন, সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশে সেন্টমার্টিন যাতায়াত ও অবস্থানের ওপর সরকার বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সরকারি এই আদেশগুলো দ্বীপ ঘিরে চার ধরনের সমস্যা ও ঝুঁকি তৈরি করবে। ঝুঁকিগুলো হলো, সার্বভৌমত্বের ঝুঁকি, অর্থনৈতিক বৃত্তি, পরিবেশগত ঝুঁকি, দ্বীপবাসীর মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনগত ঝুঁকি।
তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন ভৌগোলিক অবস্থানগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর জায়গা। ইতিমধ্যেই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মি দ্বীপটিকে একাধিকবার তাদের বলে দাবি করেছে। মিয়ানমারের সরকারি ম্যাপেও সেন্টমার্টিনকে তাদের দেখিয়েছে। এ ছাড়া আরাকান আর্মিও দ্বীপটিকে তাদের বলে দাবি করেছে। এখন দ্বীপে যাতায়াত ও অবস্থানে বাধা এলে দ্বীপের ১০ থেকে ১২ হাজার বাসিন্দার প্রায় শতভাগের জীবন-জীবিকার একমাত্র উপায় পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জীবিকা নির্বাহের ভিন্ন উপায় না থাকায় দ্বীপবাসী তাই বেঁচে থাকার তাগিদেই দ্বীপ ত্যাগে বাধ্য হবে। একসময় দ্বীপটি জনশূন্য হয়ে যাবে। ফলে মিয়ানমারের মগ, আরাকান ও ভারতীয় জেলেদের সেন্টমার্টিনে আনাগোনা বেড়ে যাবে। সুযোগ বুঝে তারা দ্বীপটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে।
বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে জবি শিক্ষার্থী বলেন, সেন্টমার্টিন-কেন্দ্রিক পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের জনগণ ভারতে চলে যাবে অবকাশ যাপন করতে। ফলে আমাদের দেশের পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভারতীয় পর্যটনশিল্প প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্বীপে পর্যটন বন্ধ হয়ে গেলে দ্বীপবাসী বাধ্য হয়ে কোরাল কেটে সেগুলো বিক্রি করা শুরু করবে। ফলে দ্বীপে পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হবে। দ্বীপে যাতায়াতের ওপর বিধিনিষেধ দ্বীপবাসীর মৌলিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
এ এইচ ফাইম বলেন, দ্বীপবাসীসহ সবারই অন্যতম মৌলিক অধিকার হচ্ছে খাদ্য। দ্বীপে বিধিনিষেধের ফলে দ্বীপবাসীর খাদ্যের জোগান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, এতে দ্বীপবাসীকে মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। দ্বীপের ২০ শয্যাবিশিষ্ট একমাত্র হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দ্বীপবাসী তাদের চিকিৎসা পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকেও সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এককথায়, দ্বীপে যাতায়াতে সরকারি বিধিনিষেধ দ্বীপবাসীকে একটি দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়ে তাদের মৌলিক ও মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে ধারা ১জ৩ তে বলা হয়েছে, নিজ রাষ্ট্রের চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং বসবাস করার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। নারিকেল দ্বীপে যেতে বাধাপ্রাপ্ত করার সরকারি নির্দেশনা ওই ঘোষণাপত্রের ২, ৩, ৯, ১৩ ও ১৪ ধারার লঙ্ঘন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ীও এটি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। অতএব, সরকারকে অবশ্যই দ্বীপবাসী ও বাংলাদেশের সব নাগরিককে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ, অবস্থান ও চলাচলের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কোনো রকম বাধা দেয়া যাবে না।
তাই দেশের অখণ্ডতা, পর্যটন শিল্প, পরিবেশ ও দ্বীপবাসীর মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষার্থে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে সব ধরনের সরকারি বাধা তুলে নিতে হবে বলে তারা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীগোষ্ঠী কর্তৃক ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোও হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি প্লাটফর্মের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক জিয়ায়ুল হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি প্লাটফর্মের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ মাহদী হাসানসহ আরও অনেকে।
মন্তব্য করুন