চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ছাত্রশিবির যেসব প্রোগ্রামে থাকবে আমরা সেখানে যাব না’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ছাত্র সংগঠনের উপস্থিত প্রতিনিধিরা। ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ছাত্র সংগঠনের উপস্থিত প্রতিনিধিরা। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যকার এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে, ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। একই প্রশ্নে চবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা বলেন, আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিন্ধান্তের কারণে আমরা সেখানে যাইনি। কেন্দ্রের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ছাত্রশিবির যেসব প্রোগ্রামে থাকবে আমরা সেখানে যাব না।

মতবিনিময় সভায় ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মুহাম্মাদ ইব্রাহীম বলেন, ৫ আগস্টের পরে ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এখনো মাঠে থাকতে হচ্ছে। আইনের শিথিলতার অভাবে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যা, প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের উপর এসে পড়ছে। অথচ তাদের এখন রাষ্ট্র গঠনে সভা-সেমিনার এবং সিম্পোজিয়াম করার কথা। সংস্কার প্রক্রিয়া কীভাবে হওয়া উচিত তা দেখানোর কথা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রশাসনের কাজ কি? প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব পলিসি মেকারদের। কিন্তু তারা যদি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পেছনে অন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে ভুল করবে। দেখা যাবে শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়রুল হাসান আরিফ বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির দুটি কনসার্ন৷ একটি হচ্ছে জুলাই গণহত্যার বিচার। আমরা দেখছি জুলাইয়ের বিচার সঠিকভাবে হচ্ছে না। আবার আমরা মবেরও পক্ষে না। আমরা আইনের মাধ্যমে এমনভাবে বিচার করতে চাই যাতে কখনো কেউ বলতে না পারে ক্যাঙারু কোর্টের মাধ্যমে খুনিদের বিচার হয়েছে। আমাদের আরেকটি কনসার্ন সংবিধান সংস্কার। আপনারা দেখবেন আমাদের সংবিধানের পাওয়ার স্ট্রাকচার এমন, যে কেউ স্বৈরাচার হতে বাধ্য। আমরা এমন সংস্কার চাই যাতে সাংবিধানিকভাবে কেউ নতুন হাসিনা হতে না পারে।

ইসলামি ছাত্র মজলিস চবি শাখার সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি বলেন, আফসোস হচ্ছে মুখে আমরা ঐক্য এবং সংহতির কথা বলি। কিন্তু আজকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সংহতি সভায় অনেক ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন উপস্থিত নেই। সংহতি কি শুধুই ব্যানারে দেখানোর জন্য? রাজনৈতিক যে প্যারামিটার দিয়ে আমরা ছাত্রলীগকে মাপি তা অন্য সংগঠনের সাথে যায় না। আমরা বিশ্বাস করি ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল অন্য সবার থেকে ভিন্ন। ছাত্রলীগের সাথে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র মজলিসসহ অন্যান্য সংগঠনের যে দ্বন্দ্ব ছিল তা অন্য সংগঠনের সাথে থাকতে পারে না। কিন্তু ২৪-এর পরেও যদি আমরা একই দ্বন্দ্ব ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের বা অন্য সংগঠনের মধ্যে দেখি তাহলে তা অপ্রত্যাশিত।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদলের একটি বড় অবদান ছিল। কিন্তু আজকে ছাত্রদল উপস্থিত নেই- যেটা হতাশাজনক। আমরা সবাই দলের মধ্যে যদি ঐক্য ধরে রাখতে না পারি তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সবার মধ্যে ঐক্য চায়, বিভেদ নয়।

ইসলামি শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমাদের ছাত্র সংহতি শুধুই এক সপ্তাহের জন্য হওয়া উচিত না। এটা যতদিন পর্যন্ত একটা স্ট্যাবল সরকার আসবে ততদিন থাকা উচিত। কারণ ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। কখনো তারা রিকশাচালক লীগ, কখনো ইসকন লীগ, কখনো সাকিব লীগ হয়ে ফেরত আসবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, কে কতবড় সংগঠন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কে কতটুকু শিক্ষার্থীদের পক্ষে রয়েছে। অনেকে বলছেন জুলাই আন্দোলনে আমরা ছাত্র সংগঠনের অবদান অস্বীকার করছি। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি না। কখনোই আমরা এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি কারো অবদান অস্বীকার করিনি। আমি মনে করি ছাত্র সংগঠনগুলো পেছনে ছিল বলেই আজকে আমরা সামনে আসতে পেরেছি। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। একই ভাবে সামনেও ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবে খুবই দুঃখ লাগছে- আজকে বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠন এবং অনেকগুলো ক্রিয়াশীল সংগঠন উপস্থিত নেই। আপনাদের রাগ-অভিমান থাকতে পারে। এগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি না আসেন তাহলে সমাধানের সুযোগ তো তৈরি হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে ২৫ নভেম্বর এক সপ্তাহব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকরি বাঁচাতে বেরোবি শিক্ষক গোলাম রব্বানীর গণস্বাক্ষর অভিযান

ঢাবি ছাত্রীর স্ট্যাটাস / ‘প্লিজ হেল্প মি, জীবননাশের আশঙ্কায় আমি’ অতঃপর... 

‘এমবাপ্পে সমস্যা’—যা বললেন কোচ

ইউরোপ যাওয়ার পথে ১৪ দিনের অনাহারে মৃত্যু, মরদেহ সাগরে ভাসানো

জেল থেকে পালিয়ে বাদীকে জোড়া খুনের আসামির হত্যার হুমকি

থার্ড টার্মিনালের অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে তদন্ত হবে : হাসান আরিফ

নেতাদের চালচলনে মানুষ যেন কষ্ট না পায় : তারেক রহমান

শুরুটা ভালো করার প্রত্যাশা তামিমের

এইচএসসির ফরম পূরণের তারিখ ঘোষণা

‘কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদককে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে দেব না’

১০

আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

১১

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদ

১২

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান করেছেন মমতা : রিজভী

১৩

জাবি শিক্ষার্থী রাচির পরিবারকে ৩ কোটি ক্ষতিপূরণ দিতে নোটিশ

১৪

বাংলাদেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে : মাহমুদুর রহমান

১৫

বাউবি বিএ-বিএসএস পরীক্ষার প্রথম দিনে ৪৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৬

‘মমতার বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ’

১৭

রাজশাহীতে ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে দিল ছাত্রদল

১৮

সবুজায়নের লক্ষ্যে ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

১৯

ঢাবি থেকে ৩৫ জনের পিএইচডি ও ১৯ জনের এমফিল ডিগ্রি অর্জন

২০
X