বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েও যোগদান করতে পারেননি ভাইভা বোর্ডে প্রথম স্থান অর্জন করা প্রার্থী গোলাম রব্বানী। ভয়াবহ এক জালিয়াতির শিকার হয়েছেন তিনি। তার অভিযোগ, রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে যোগদান করতে দেয়নি। পরে কয়েক দফা যোগাযোগের পর তৎকালীন ভিসি আব্দুল জলিল মিয়া তাকে পুনর্নিয়োগের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তব হয়নি।
ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে গোলাম রব্বানী নামের আরেক প্রার্থীকে। বর্তমানে তিনি ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ঘটনার ১৪ বছর পর সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নিয়োগ কার্যকর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন ওই প্রার্থী।
আবেদনে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নিয়োগ বাছাই বোর্ডে অংশগ্রহণ করি। প্রথম স্থান অধিকার করার পর বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১১তম সভার অনুমোদনক্রমে আমাকে ২২ ডিসেম্বর ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের জন্য আমার গ্রামের ঠিকানায় (রাজশাহীর বাগমারা) নিয়োগপত্র পাঠানো হয়। নিয়োগপত্রে ২০১০ সালের ২ থেকে ৪ জানুয়ারির মধ্যে যোগ দিতে বলা হয়।
সেই অনুযায়ী আমি ২ জানুয়ারি লালকুঠিস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রারের কাছে প্রভাষক পদের যোগদানপত্র প্রদান করি। কিন্তু রেজিস্ট্রার আমার যোগদানপত্র গ্রহণ না করে টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল মিয়ার সঙ্গে আমি দেখাও করি। তিনিও আমার যোগদানপত্র গ্রহণের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি। সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি আমাকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বলাবলি করছিলেন যে, আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হবে না।
পরে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, আমার নামের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে এমন একজন প্রার্থী (মো. গোলাম রব্বানী, গ্রাম-পূর্ব শুখানপুকুরী, উপজেলা-ঠাকুরগাঁও সদর, জেলা-ঠাকুরগাঁও, বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ) কে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রভাষক পদে যোগদান করানো হয়েছে।
পরে তৎকালীন উপাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে যোগদানপত্র গ্রহণের অনুরোধ করলেও তিনি রাজনৈতিক কারণে যোগদানপত্র গ্রহণ সম্ভব নয় বলে জানান। নিয়োগপত্র পেয়েও যোগদান করতে না পারায় অনেকে আমাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে বললেও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় তা থেকে বিরত থাকি। ১১তম সিন্ডিকেটের ওই নিয়োগ অনুমোদন ও নিয়োগপত্রের কপি এসেছে কালবেলার হাতে। এতে দেখা যায়, সিন্ডিকেট সভায় ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে দুজন ও সহকারী অধ্যাপক পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন হলেন গোলাম রব্বানী ও আরা তানজিয়া। এই পদে অপেক্ষমাণ রাখা হয় মো. মনিরুজ্জামান নামে আরেকজন প্রার্থীকে।
২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী গোলাম রব্বানীর নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, যার স্মারক নং- বেরোবিঃ/রেজিঃ/শিক্ষক নিয়োগ/৫০৬/(০৬),০৯। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, নিয়োগ পাওয়া বর্তমানে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় ২৭ ডিসেম্বর, যার স্মারক নং—বেরোবিঃ/রেজিঃ/শিক্ষক নিয়োগ/৫২৪/(০৬),০৯।
ভুক্তভোগী গোলাম রব্বানী বলেন, তৎকালীন প্রশাসন যেহেতু রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের কারণে আমাকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। তাই বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে নতুন স্বাধীন দেশের প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন, দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্বে শুধু নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণে আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, আমার নিয়োগ লাভের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ড. মো. শওকাত আলী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়েছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। এটা খতিয়ে দেখার বিষয়। তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা চাই, যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন