ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর দায় হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ও কলেজে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ব্রি. জে. (অবসরপ্রাপ্ত) ইফফাত আরা।
তিনি বলেন, অভিজিতের মৃত্যুর দিন রাতে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি ৯০ ভাগ সমাধান হওয়ার পরেও পরিবার ও শিক্ষার্থীরা অন্যদের তা না জানানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর থেকে প্রতীয়মান হয়, কোনো কোনো কুচক্রী মহল হাসপাতালের ওপর মিথ্যা দায়-ভার চাপানোর ঐকান্তিক চেষ্টায় লিপ্ত, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রোগীর মৃত্যু হলেই ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা বলে চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের লাঞ্ছিত করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ইফফাত আরা বলেন, হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসাসেবার সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট করা, হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসক নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের ব্যাপক ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এতে অসুস্থ রোগীদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করার মত ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
ন্যাশনাল কলেজে হামলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কলেজের প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ শিক্ষার্থী হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়, বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, দন্ত বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ ছাড়া ক্যাশ কাউন্টারে ভাঙচুর করে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী, সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সেবায় নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখাতেও ব্যাপক ভাঙচুর করে।
দশ হাজার টাকার বিনিময়ে মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে কলেজের উপপরিচালক ডা. মো. রেজাউল হক বলেন, আমরা নিহতের পরিবারের অনুরোধে তাদের আইসিইউ বিল ৩৬ হাজার টাকার বিল স্থগিত রাখি। তার পরিবারের কাছে অ্যাম্বুলেন্স বিল ছিল না। সেটার জন্য আমরা ১০ হাজার টাকা দিতে যাই। পরে তারা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের থেকে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে সক্ষম হয়। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ১০ হাজার টাকা দিয়ে কী মৃত্যুর ঘটনা চাপা দেওয়া সম্ভব?
রোগীর মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট না দেখানো, আইসিইউতে ভর্তি ও ডেথ সার্টিফিকেটে জোর করে পরিবারের নিকট থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রাতে আমাদের হাসপাতালে সিনিয়র কেউ থাকে না। সিকিউরিটি ইনচার্জ ও ইমার্জেন্সি ডাক্তার থাকে। তাদের (মোল্লা কলেজ) স্টুডেন্টরা যখন আসে তখন আমরা হাসপাতালে ছিলাম না। পরে আমরা আসি। আমরাই জিম্মি ছিলাম। পরে পুলিশ ও আর্মির সাহায্যে রক্ষা পাই।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও ডা. মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জড়িতের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, অভিজিতের মারা যাওয়ার ঘটনায় তাদের কলেজের ৩০/৪০ জন হাসপাতালে আসে। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়। সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে এসেছিল। তখন তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এটা আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা। আমরা তাদের ডাকিনি।
এদিকে অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও ডাক্তারের অব্যাহতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। সেখানে ডা. মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি রাখার জন্য বলা হয়। তাদের বলা হয়, দেশের যেকোনো জায়গায় একজন রেজিস্ট্রার্ড ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ রাখার জন্য। তারা দুই দিন পার হলেও তাদের প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কর্তব্যরত ডাক্তার শেফাকে কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলেছি।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সমকালের সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের ওপর চড়াও হন হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার ও শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উত্তর পর্বে ওই সাংবাদিক জানায়, গতকাল নিউজের জন্য বক্তব্য নিতে চাইলে হাসপাতালের এক ডাক্তার হুমকি দেন। হুমকি দেওয়া ওই ডাক্তারের নাম ইমরান। তিনি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে কর্মরত আছেন।
একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকর্মীকে হুমকি দিতে পারেন কি না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রাখেন ওই সাংবাদিক। এ ছাড়া ন্যাশনাল হাপাতালের সঙ্গে মাহাবুবুর রহমান কলেজের সংঘর্ষে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ কিভাবে জড়িত হলো প্রশ্ন করেন যমুনা টিভির সাংবাদিক রাব্বি। তবে তার প্রশ্নটিও এড়িয়ে যান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পরবর্তীতে সকল সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন। এ ঘটনার পরেই সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হওয়া সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও ডাক্তাররা। সংবাদ সম্মেলনে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালসহ শিক্ষক, ডাক্তার ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন