তীব্র শিক্ষক সংকটে নোয়াখালী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষা কার্যক্রম। বিভিন্ন বিভাগের খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১২টি বিভাগে অপর্যাপ্ত শিক্ষক থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকায় অনেক বিভাগই একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং একই শিক্ষক একাধিক কোর্সে ক্লাস নেওয়ার ফলে শিক্ষার গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগে বর্তমানে ৪ জন শিক্ষকের ১ জনই শিক্ষা ছুটিতে। শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহতিতে ১ জন। পাঁচটি ব্যাচের একাডেমিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে ২ জনে পক্ষে ক্লাস ও শ্রেণি কার্যক্রম করা সম্ভব নয়। ফলাফলস্বরূপ আমাদের শিক্ষাবর্ষের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যখন স্নাতক সম্পন্ন করে ফেলছে আমরা তখন চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে শ্রেণি কার্যক্রম চলে।
শুধু আইন বিভাগেই নয় একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, সমাজকর্ম বিভাগ, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ, জুয়োলজি বিভাগ, বিএমবি বিভাগ, এমআইএস বিভাগ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের। এসকল বিভাগের মধ্যে মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ১ জন অস্থায়ী রয়েছেন, রসায়ন বিভাগের ৪ জনের মধ্যে ১ জন অস্থায়ী এবং ১ জন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহতিতে আছে। পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক রয়েছে ৩ জন এদের মধ্যে ১ জন অস্থায়ী, সমাজকর্মে বিভাগের ৪ জন শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের মোট শিক্ষক রয়েছে ৫ জন এদের মধ্যে ২ জন শিক্ষা ছুটিতে আছে, জুয়োলজি বিভাগের শিক্ষক আছে ৫ জন এদের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছে ১জন, বিএমবি বিভাগের শিক্ষক আছে ৭ জন এদের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছে ৩ জন, এমআইএস ৮ জন এদের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছে ৩ জন, শিক্ষা বিভাগে শিক্ষক আছে ৬ জন এদের মধ্যে ১ আছে শিক্ষা ছুটিতে, ডিবিএ বিভাগে শিক্ষক আছে ১৩ জন এদের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছে ৭ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সকল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট গুলো থেকে এক বছর, ছয় মাস পিছিয়ে আছে। তার মূল কারণ বিভাগে অপর্যাপ্ত শিক্ষক থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০৯ জন শিক্ষক থাকলেও তাদের মধ্যে অন্তত ১৩১ জন শিক্ষকই আছেন শিক্ষা ছুটিতে। ইতোপূর্বে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও সম্প্রতি এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চরমে পৌঁছেছে শিক্ষক সংকট।
এ বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক জি এম রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গেস্ট টিচার নিয়োগে সম্মতি হয়েছে। এ ছাড়া ইউজিসি থেকে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিলে শিক্ষক সংকট কাটে ওঠা যাবে।
এই বিষয়ে আইন বিভাগের বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক জামসেদুল ইসলাম বলেন, চারজন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ৫ জন শিক্ষক ক্লাস নেয়। তবে আমাদের ডিপার্টমেন্ট সেশনজট আছে। আগামী এক বছরের মধ্যে শূন্য সেশনজট করব।
পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, আমাদের অলরেডি ২৭৬ জন শিক্ষকের জন্য ইউজিসিতে আবেদন করা আছে। আশা করি, ২০০ এর মতো শিক্ষক প্লাস মাইনাস নিয়োগের জন্য অনুমোদন পাব। অনুমোদন পেলে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আমাদের শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।
মন্তব্য করুন