শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যকার সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষকসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মো. ইসমাইল, তানভীর ইন্টার মিডিয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, মাসুদ দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী, শাহরিয়ার ও ইয়াকুব ২০২৩-২৪ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী, দেওয়ান নাঈম (২০২১-২২) সমাজ বিজ্ঞান, তৌফিক (২০২২-২৩) বাংলা বিভাগ, হাসান মিয়া (২০২২-২৩) ইংরেজি, মুহাম্মদ ইউসুফ (২০২২-২৩) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বাকি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, আমরা যখনই শুনতে পেরেছি যে বাস আক্রান্ত হয়েছে তখন ঘটনাস্থলে যাই। এরপর বিকালে সেনাবাহিনী ছাত্রদের মারধর করে এবং অডিটোরিয়াম ভাঙচুর করে। এর একটা সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা দায়ী তাদের বিচার চাই। আমাদের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল ইসলাম। এ সময় অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াসসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দাবিগুলো হলো-
১. দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি শিক্ষকরাও আহত হয়েছেন।
২. আমাদের স্থাপনায় সেনাবাহিনী সরাসরি হামলা ও ভাঙচুর করেছে। যা আমাদের জন্য লজ্জানজক। এ হামলায় সংশ্লিষ্ট জড়িত প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. বিশেষ করে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা যারা এই হামলার নির্দেশ দিয়েছে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
৪. ইতোপূর্বে সকল বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সিটি কলেজ কতিপয় সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এবং পরবর্তী সংঘর্ষ এড়াতে সিটি কলেজকে স্থানান্তর করতে হবে।
৫. সিটি কলেজের যেসব শিক্ষকরা এই নিন্দনীয় ঘটনা সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে এবং জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে পরিদর্শন করতে হবে।
৭. এই হামলায় জড়িত সেনা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
৮. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন এবং শত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাই পরিকল্পিতভাবে ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হামলা করে বর্তমান সরকারতে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে সরাসরি সিটি কলেজ এবং পুলিশ জড়িত ছিল।
৯. ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সকল দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে ঢাকা কলেজে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে দুপুরে সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে সায়েন্সল্যাব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। পরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং সেনা সদস্যকে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঢাকা কলেজের ভিতরে ঢুকে অডিটোরিয়ামের দরজা ভাঙচুর করে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা কলেজের বাসে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন