রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) গণিত বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে শিক্ষক সংকটের কারণে নিজেই ক্লাস নিতে শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ৯ টায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের নবীন ব্যাচের ক্লাস নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস শেষে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ শুরু করেন।
জানা যায়, ৩ নভেম্বর নবীন বরণের পর থেকেই উপাচার্য গণিত বিভাগের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ৯ টায় ক্লাস নেন। শিক্ষক সংকটের এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিজেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রেরণাদায়ক উদ্যোগ ।
বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক সংকটে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৯২ জন। অর্থাৎ প্রতি ৪৪ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। অথচ ইউজিসির শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককেই গড়ে ৮ থেকে ১০টি কোর্স নিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষার চাপে গবেষণা কার্যক্রমে যথেষ্ট সময় দিতেন পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে কার্যত ঝিমিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগে ১৯২ শিক্ষকের মধ্যে ৩২ শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। বাকি ১৬০ শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। সে হিসাবে বিভাগপ্রতি শিক্ষক রয়েছেন মাত্র সাতজন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এক বছর মেয়াদের দুই সেমিস্টারের স্নাতকোত্তরে পড়ানো হয় ১২ থেকে ১৪টি কোর্স। সে হিসাবে চার বছর মেয়াদের আট সেমিস্টারের স্নাতকে পড়ানো হচ্ছে ন্যূনতম ৪৮ থেকে ৫৬টি কোর্স। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এক শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ৯ থেকে ১০টি কোর্স। কিছু বিভাগে তারও বেশি।
গণিত বিভাগে শিক্ষার্থীরা সাইদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্য স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন, এটি আমাদের জন্য সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। স্যার খুব সহজ ও পরিষ্কারভাবে আমাদের পাঠ্য বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেন। ক্লাসে কখনোই মনে হয় না যে একজন ভাইস চ্যান্সেলর আমাদের পড়াচ্ছেন, বরং মনে হয় তিনি একজন অভিজ্ঞ ও বন্ধুভাবাপন্ন শিক্ষক হিসেবে আমাদের পাশে আছেন। তার শিক্ষাদান পদ্ধতি ও আন্তরিকতা আমাদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সাবেক ভিসি কখনো ক্লাস নেওয়া তো দূরের কথা, ক্যাম্পাসেও খুব কমই দেখেছি। তবে বর্তমান ভিসি স্যার এসে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে, যা আমাদের জন্য শিক্ষা ও ক্যাম্পাস জীবনের মান উন্নত করবে।
উপাচার্য হয়েও ক্লাস নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, " বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট তো রয়েছেই। তাছাড়া আমি নিজ উদ্যোগে গণিত বিভাগের ক্লাস নিচ্ছি। একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন রয়েছে যে, আমি অন্যান্য বিভাগেও ক্লাস নিতে পারব।শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বজায় রাখতে এবং তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি ক্লাস পরিচালনা করছি।
উল্লেখ,আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিয়ার রহমানসহ দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
মন্তব্য করুন