আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শিক্ষকদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভা ডাকায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে সভাস্থলে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সন্ধ্যা ৬টায় সিন্ডিকেট সদস্যরা তাদের সভা শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ‘আওয়ামী সিন্ডিকেটে, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান নিয়ে সিনেট ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের একটি দল।
এই কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের নিয়ে সিন্ডিকেট মিটিং করার খবর শুনে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সিনেট ভবনে চলমান সিন্ডিকেট সভাস্থলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ এসে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করলে শিক্ষার্থীরা স্থান ত্যাগ করেন।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইসরাত জাহান ইমু নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের দালাল নীল দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়াসহ ৯ জন আওয়ামী দালাল শিক্ষক এখনো সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় আছেন। যে সিন্ডিকেট ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসিবাদী হাসিনার সহায়কের ভূমিকায় ছিল, সেই সিন্ডিকেট অবৈধ।
তিনি বলেন, আজ সিনেটে এই অবৈধ সিন্ডিকেটের মিটিংয়ে বাধা দেয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী-সহ ছাত্রদল, ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এই অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী পুনর্বাসন এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ মানি না।
আবিদুল ইসলাম খান আবিদ নামে অংশ নেওয়া একজন বলেন, আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকদের রেখে গোপনে এই সিন্ডিকেটের সভা ডেকেছে প্রশাসন। বিষয়টি সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে বিক্ষোভ করেছেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, এই সিন্ডিকেট শেখ হাসিনার দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। গত ১৭ জুলাই ঢাবি সিন্ডিকেটের এই সদস্যদের মিটিংয়েই পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সোয়াট দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিন্ডিকেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। এমনকি এই সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা এখনো নিরাপত্তহীনতায় আছে।
তিনি আরও বলেন, নিয়ম না মেনে গঠিত এই সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ করা হয়েছে। তাই এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নতুন সিন্ডিকেট গঠন করতে হবে।
দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় সিন্ডিকেট গঠন করা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নেই, সিন্ডিকেটে অবশ্যই শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা দরকার।
মন্তব্য করুন