জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের একান্ত অনুসারী হিসেবে পরিচিত সহকারী অধ্যাপক মো. হারুনুর রশিদকে অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হারুনুর রশিদকে পরবর্তী ২ বছরের জন্য প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় প্রশাসন।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন হারুনুর রশিদ। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিতে সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের অনিয়মের পক্ষে সোচ্চার তথাকথিত সচেতন শিক্ষক সমাজের মানববন্ধনেও ছিলেন সম্মুখসারিতে। আওয়ামী সমর্থিত বঙ্গবন্ধু নীল দলের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। নতুন প্রশাসন আসার পরও তোষামোদি করে বাগিয়ে নিয়েছেন পদ-পদবি। গত ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের হাউজ টিউটর হিসেবেও তিনি নিয়োগ পান।
আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু শেখ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। অ্যাকাডেমিক ও ব্যক্তিগত কারণে অনেক সময় শিক্ষকরা দায়িত্ব নিতে চান না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে বিতর্কিত কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা উচিত নয়। আওয়ামী লীগের আমলে তোষামোদি করে সুবিধাভোগী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ততা নেই, স্বৈরাচারের দোসর কেউ আবারও ক্ষমতার অপব্যবহার করুক, আমরা চাই না।
সহকারী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে প্রশাসন যাকে ভালো মনে করে, তাকেই নিয়োগ দেয়। আমি কোনো লিংক-লবিং করিনি। আমি পিওর একাডেমিশিয়ান মানুষ, আমার অ্যাকাডেমিক এবং রিসার্চ প্রোফাইল অনেক ভারী। আমি দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে পারলেই ভালো হয়।
সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের অনিয়ম-দুর্নীতিকে সমর্থন করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টাকে এভাবে দেখবেন না। আসলে দায়িত্বে থাকলে পারিপার্শ্বিক কারণে অনেক কিছুই করতে হয়।
বিতর্কিত ব্যক্তিকে একাধিকবার দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় থাকে। অভিজ্ঞতা এবং পারদর্শিতাকেও বিবেচনা করা হয়। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি যাতে একাধিক দায়িত্বে না থাকে আমরাও চেষ্টা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, একই ব্যক্তিকে একাধিক দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতেন। এখনও সেই প্রক্রিয়া চলতে দেওয়া অনুচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে যোগ্য শিক্ষক রয়েছেন, এ রকম বিতর্কিত ব্যক্তিকে বারবার দায়িত্ব দেওয়া মোটেও ঠিক নয়।
মন্তব্য করুন