শিবিরের কোনো দায়িত্বশীল বা সদস্যের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তথ্যপ্রমাণসহ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন শিকদার বলেছেন, ছাত্রশিবির বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির চর্চা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিগত দিনে বিভিন্ন মিডিয়া ছাত্রশিবিরকে শিক্ষার্থীদের কাছে দানব হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় পুরান ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় ৬০ জনের অধিক ক্যাম্পাস সাংবাদিক অংশ নিয়ে ভবিষ্যতে শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।
শিবির সভাপতি বলেন, আমাদের সংগঠনের মোট সদস্যদের মধ্যে থেকে যারা কমিটির দায়িত্বে আছেন, আপনারা তাদের দেখতে পাচ্ছেন। নেতৃত্বে আনার ক্ষেত্রে ব্যক্তির আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য, তাকওয়া, আদর্শের সঠিক জ্ঞানের পরিসর, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, শৃঙ্খলাবিধানের যোগ্যতা, মানসিক ভারসাম্য, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, কর্মের দৃঢ়তা, অনড় মনোবল, আমানতদারিতা এবং পদের প্রতি লোভহীনতার দিকে অবশ্যই নজর রাখা হয়। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যিনি নেতৃত্বে আসতে চাইবে, সে পূর্বেই নেতৃত্বের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যেহেতু কেউ নেতৃত্ব আসার দাবি করতে পারে না, তাই আমাদের সংগঠনে পদ নিয়ে কোনো ধরনের কোন্দলও নেই।
গোপন রাজনীতি বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিবির সভাপতি বলেন, আমাদের গোপন রাজনীতি করার কোনো উদ্দেশ্য নেই, আমরা কোনো সময় গোপনে রাজনীতি করি না। কিন্তু অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় আমাদের দমনপীড়ন করে রাখা হয়েছে।
শিবির কোন লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন নয় দাবি করে ইকবাল হোসেন বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্য কোনো সংগঠন আমাদের কমিটি ঘোষণা দেয় না। শিবিরে সকল সদস্য ভোট দিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করে। এছাড়া প্রতিটা শাখা ইউনিটে সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করে। দেশের ইসলামপন্থি অন্যান্য দলের সঙ্গে আমাদের যেরকম সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে, জামায়াত ইসলামীর সঙ্গেও আমাদের সেরকম সম্পর্ক রয়েছে।
ছাত্র সমস্যা সমাধানে শিবির সব সময় কাজ করে জানিয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, কনসাস স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অরগানাইজেশনের মাধ্যমে ছাত্রশিবির সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে।
জবি শাখা শিবির সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সমাজের সঠিক অবস্থা তুলে ধরা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা সমাজের দর্পণ। কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী আপনারা সত্য ও মিথ্যাকে মিলিয়ে ফেলবেন না। অন্যায় জুলুমকে কলমের মাধ্যমে তুলে ধরবেন।
আসাদুল ইসলাম আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে আমরা নিজেদের জনশক্তি হিসেবে কল্পনা করি। কে শিবির করে কে শিবির করে না, এভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের বিভক্ত করি না। কোনো শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লে আমরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের আলোকে সহায়তা করার চেষ্টা করি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থই আমাদের কাছে প্রধান্য পায়।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীর, জবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আস সাইফ ও জবি রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি আমৃত রায়সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিক নেতারা শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি, দরিদ্রছাত্রদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও নারীদের সহায়তা ও সমর্থন বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
এ সময় জবি শাখা শিবিরের অফিস সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক শাহিন আহমেদ, দাওয়াহ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, বাইতুল মাল সম্পাদক মোহাম্মদ শাওন সর্দার, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইনুদ্দিন, স্কুল বিতর্ক ও তথ্যপ্রযুক্তি নাহিদ হাসান রাসেল, আবাসন ও পাঠাগার সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ, এইচআরডি ও ব্যবসায় শিক্ষা সম্পাদক মো. জাহেদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন