ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার সভাপতি আব্দুল মোহাইমেন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। তবে সেটি সংগঠনগুলো না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি নীতিমালা প্রয়োজন। যার ভেতরে ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনীতি চর্চা করবে। সে রাজনীতি হবে শিক্ষামূলক, গবেষণামূলক। সেখানে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করা হবে। আর এই নীতিমালা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রূপরেখা দেবে ছাত্র সংগঠনগুলো।
শনিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে ‘ছাত্র রাজনীতি সংস্কার প্রস্তাবে ছাত্র নেতৃবৃন্দের বোঝাপড়া’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন এই সভার আয়োজন করে।
আব্দুল মোহাইমেন বলেন, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন তারা সকলেই রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিবর্গ। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরার জন্য এই রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরাই কাজ করে থাকেন। আর সুষ্ঠু ধারার ছাত্র রাজনীতি চর্চার মাধ্যমেই এই রাজনীতি সচেতনতা তৈরি হয়। তাই ছাত্র রাজনীতি যদি না থাকে তাহলে ভবিষ্যতে দেশ নেতৃত্ব সংকটে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এই জায়গা থেকে ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রবান্ধব কাজ করা, সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা এবং সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তোলা। এই ছাত্র রাজনীতিই আমরা চাই। তবে এর আগে ছাত্র রাজনীতির কিছু জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, আমরা বিগত ১৫ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাজনীতির যে প্র্যাকটিস দেখে আসছি সেটাকে আমরা রাজনীতি বলতে পারি না। আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন দলের কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে পদ পেলেই তিনি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক মনে করতেন। তারা ছাত্র রাজনীতি বলতে মনে করতেন হলের ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়া, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা, নিজের আধিপত্য বিস্তার করা।
তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদল এসব রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে রাজনীতির প্র্যাকটিস হোক। আমাদের আগামীর রাজনীতি হবে মানবিক রাজনীতি। ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী নেতিবাচক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, আমরা শিক্ষার্থী সমাজ চাই একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ততে আর কোনো হল দখলের মতো ঘৃণ্য কাজ থাকবে না, সিট বাণিজ্য থাকবে না, টেন্ডারবাজি থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার উন্নতর পরিবেশ ও একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাগারে পরিণত করতে চাই। সেই প্রচেষ্টাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। আন্দোলনে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা, যেটার মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে দেওয়া এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সদা সোচ্চার থাকে। তাই আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্যাম্পাসে কেন্দ্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেওয়াটা ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী মো. ফাহিম রেজা। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, সমন্বয়ক তাসিন খান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন