জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বুড়িগঙ্গার দখল ও দূষণ রোধে বাপার ৭ দফা দাবি

বুড়িগঙ্গা নদীর রক্ষায় মানববন্দন করছেন বাপার সদস্যরা। ছবি : কালবেলা
বুড়িগঙ্গা নদীর রক্ষায় মানববন্দন করছেন বাপার সদস্যরা। ছবি : কালবেলা

ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গা বাঁচলে ঢাকার মানুষ বাঁচবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় সোয়ারীঘাটে নদীর দখল ও দূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজধানীর চতুর্দিকে বৃত্তাকার নৌপথ চালুসহ সাত দফা দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচি এ মন্তব্য করেন তিনি।

আলমগীর কবির বলেন, রিজওয়ানা আপা নিজেই নদী রক্ষায় একটি করে নদী দূষণমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমাদের দাবি শুধু একটি নয় দেশের সকল নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। ঢাকার চারদিকে চক্রাকার নৌপথ চালু করলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস। এসময় তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী নষ্ট হলে ঢাকার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়বে। বিগত সরকারগুলো অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদী রক্ষা করার।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহাবুব হোসেন বলেন, দুই দশক ধরে আন্দোলন করে আসছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি। যারা এখানে দায়িত্ব আসে তারাই অসৎ উপায় অবলম্বন করে। আগে বুড়িগঙ্গার পানি শরীরে লাগলে ময়লা পরিষ্কার হতো আর এখন বুড়িগঙ্গার পানি শরীলে লাগলে নিজেদেরই পরিষ্কার করতে হয়। এটাকে এখন ময়লার ভাগাড় বলা হয়। তাই এই বুড়িগঙ্গা নদীর রক্ষায় সরকারসহ সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন আর নেই। স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বুড়িগঙ্গা তিলে তিলে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এ নদীর জায়গা দখল করে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। কমছে নদীর প্রশস্ততা এবং প্রাণপ্রবাহ। প্রতি মুহূর্তে নদীর ভেতর ফেলা হচ্ছে পানি দূষণকারী ভয়ংকর সব বর্জ্য। বুড়িগঙ্গার বড় অংশেই নেই জলজ প্রাণী বা মাছ। এ নদীর পানি বহু আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে। এমনকি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শ্বাস নেওয়া যায় না। পানির দুর্গন্ধে আশপাশে টেকাই দায়।

বুড়িগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুনার থেকে বসিলা হয়ে লালবাগ লোহারপুল পর্যন্ত আদি বুড়িগঙ্গা সম্পূর্ণরূপে দখল করে ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সরকারী স্থাপনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেসরকারী ও শিল্প কারখানার মত বৃহৎ প্রকল্প ও ব্যাপক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।

বিগত সরকারের আমলে দেশের নদী দখলদারদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমরা দীর্ঘ দিন যাবৎ বিগত সরকারের কাছে অবিরাম দাবি তোলার পরও বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারদিকের নদীর তল ও পাড়ের উপর স্থাপিত অসংখ্য ছোট-বড় বেআইনি স্থাপনা এখনও অক্ষত রয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, বিগত সরকার নদীগুলো নদী হিসেবে রাখতে আগ্রহী নন। কিন্তু আমরা জানি বর্তমান সরকার নদী রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা অন্তর্বর্তী সরকারে নিকট দাবি করছি, বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদী ও জলাশয়কে দখলমুক্ত করে দেশের নদীগুলোকে প্রবাহমান রাখবে।

বাপার ৭ দফা দাবিগুলো হল :

১. সীমানার অভ্যন্তরে তালিকা অনুযায়ী সরকারি স্থাপনা, বেসরকারি প্রকল্প ও শিল্পকারখানা, মাঝারি আবাসনসহ সকল প্রকারদখলী স্থাপনা উচ্ছেদ অথবা পুনর্বাসন করার মাধ্যমে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে; ২. আদি বুড়িগঙ্গা নির্মোহভাবে ও সম্পূর্ণ দখলমুক্ত ও পুনঃখনন করতে হবে এবং এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে; ৩. প্রত্যেকটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল, প্লাবন অঞ্চল ও কৃষি জমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে; ৪. জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে পনর্গঠন করে হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে দেশের অভ্যন্তরে সমস্ত নদী-বিল-হাওর এবং জলাশয়ের অভিবাবক হিসাবে দায়িত্ব দিয়ে নদীগুলোর দখলদারদের তালিকা পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। ৫. রাজধানীর চারদিকে চক্রাকার নৌপথ চালু করতে অবিলম্বে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে চক্রাকার নৌপথ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. নদীর সীমানা নির্ধারণের ভিত্তি হিসেবে মূল ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) এবং ভরা মৌসুমে নদী প্রবাহের ধারা ব্যবহার করতে হবে; ৭. নদী, খাল ও জলাশয় দূষণকারীদের ওপর উপযুক্ত জরিমানা আরোপ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এগিয়ে আনা হয়েছে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ

ডেঙ্গুতে আরও ৫ মৃত্যু, আক্রান্ত ৭০ হাজার

যেসব লক্ষণে বুঝবেন লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কি না

বনভূমিতে গারোদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার : রিজওয়ানা

সিলেটে যুবলীগ নেতা ইকবাল গ্রেপ্তার

‘রাজনীতিতে এক নম্বর স্থানে যাওয়া জামায়াতের লক্ষ্য নয়’

বিএনপির র‌্যালিতে বাঙলা কলেজ ছাত্রদলের অংশগ্রহণ

নিপসমের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

নবীরা বলে-কয়ে অবসর নেন, সাকিবরা রয়ে যান সন্দেহের খাতায়

ট্রাম্পের এক ঘোষণায় বিপাকে ১০ লাখ ভারতীয়

১০

ট্রাম্প জেতায় দেশ ছাড়ার ঘোষণা ইলন মাস্কের কন্যার

১১

‘পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন পকেটে ঢোকাতেন আ.লীগের কাউন্সিলররা’

১২

হত্যা ও নাশকতার মামলায় আ.লীগ নেতা ও যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

১৫ বছরে রাষ্ট্রের সব অর্গান অপবিত্র হয়ে গিয়েছিল : গোলাম পরওয়ার

১৪

ছাত্রদল নেতার ঘর দখলের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

১৫

দুই মন্ত্রীর রদবদল অনুমোদন করল ইসরায়েলি পার্লামেন্ট

১৬

একটি সুন্দর দেশ গড়ার আশা সেনাপ্রধানের

১৭

নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা জানাল জামায়াত

১৮

ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে শ্যালক ও দুলাভাই নিহত

১৯

নেদারল্যান্ডসে ইসরায়েলি সমর্থকদের বেধড়ক পেটালেন ফিলিস্তিনপন্থিরা

২০
X