খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) খানজাহান আলী হলের মাঠ প্রাঙ্গণে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠান চলাকালে মাঠে তামাকজাতীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ও ধূমপানের জন্য ৬টি বুথ খোলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে আবেদনে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ধূমপানের জন্য সংগীতানুষ্ঠানে বুথ খোলার অনুমতি দিতে নারাজ। পরে ‘স্ন্যাকস’ জাতীয় পণ্য বিক্রয় ও ‘রিফ্রেশমেন্ট বুথ’ হিসেবে ৪টি বুথ তৈরি করে তারা।
কিন্তু কী হবে এ বুথগুলোতে? এসব নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ঢাকা ব্রডকাস্টের উদ্যোগে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এ সংগীতানুষ্ঠান।
ঢাকা ব্রডকাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুদান আল আমিন স্বাক্ষরিত একটি আবেদন গত ৩ অক্টোবর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক বরাবর জমা দেওয়া হয়।
ওই আবেদনে ৮টি দাবি উত্থাপন করা হয়। এরমধ্যে সংগীতানুষ্ঠান প্রাঙ্গণে তামাকজাতীয় পণ্য-বিক্রয় ও ধূমপানের জন্য অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্দিষ্ট ৬টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণের বিষয়টি ছিল। অবেদনপত্রটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমের স্বাক্ষরে অনুমতি পায়।
কিন্তু পরে আবেদনপত্রে ‘সই’ করা প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, আবেদনপত্রটি প্রথমে পেয়ে অনুমোদন দিয়েছিলাম। পরে ৬ নম্বর পয়েন্টটি দেখে বৃহস্পতিবার রাতেই ফোন করে পয়েন্টটি বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের কোনো কার্যক্রম চলার সুযোগ নেই।
আয়োজক কমিটির সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, বুথে কোনো ধূমপান হবে না। এখানে স্ন্যাকস জাতীয় পণ্য বিক্রয় ও রিফ্রেশমেন্ট বুথ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
ঢাকা ব্রডকাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুদান আল আমিন বলেন, আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হল মাঠে সংগীতানুষ্ঠানের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। উপাচার্য আবেদনটি অনুমোদন দিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, এ আয়োজনের জন্য ঢাকা ব্রডকাস্ট ধূমপানের জন্য ৬টি বুথের কথা বলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধূমপানের কোনো সুযোগ নেই। তাই এগুলো বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে ‘রিফ্রেশমেন্ট বুথ’ হিসেবে ৪টি বুথ তৈরি করে তারা। তাদের বলা হয়েছে তামাকজাতীয় পণ্য বিক্রি বা এ ধরনের কোনো কার্যক্রম এই রিফ্রেশমেন্ট বুথে করা যাবে না।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন খুলনা জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য, অ্যাডভোকেট মো. মাছুম বিল্লাহ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ধূমপান ও তামাক মুক্ত। বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট ও অর্জনকে বিতর্কিত করতেই তামাক কোম্পানির এটি কূট কৌশল। এ ধরনের আয়োজনকে সমর্থন ও সহযোগিতার পেছনে যারা কাজ করেছেন তারা দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং মেধাবী যুবসমাজকে ভয়াবহ নেশার দিকে ঠেলে দিয়ে দেশকে নেশাগ্রস্ত ও মেধা শূন্য করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা অনুষ্ঠানস্থলটিকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কাছে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে ইতোমধ্যে নব্বই হাজার সিগারেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টক করা হয়েছে। তাদের মূল টার্গেট সিগারেট বিক্রি করা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ এখন মাদকমুক্ত। এগুলো করার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজে অনুষ্ঠানে থাকব। তামাকজাতীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ও ধূমপানের জন্য যে বুথ তৈরি করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুথে স্ন্যাকস জাতীয় পণ্য বিক্রি করা হবে।
মন্তব্য করুন