ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো মুনাফার লোভে শিশু-কিশোর-তরুণদের নেশার দিকে ধাবিত করতে বিভিন্নরকম প্রতারণা করে যাচ্ছে। কিন্ডারগার্ডেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকটবর্তী স্থানে, প্রবেশ পথে, সামনে বা পাশে সিগারেটের দোকান বসাচ্ছে। আইন লঙ্ঘন করে এসব দোকানে সিগারেটের নানা মোড়ক ও ব্র্যান্ডের রংয়ে সাজিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ মদদে আইন লঙ্ঘন করে নাটক-সিনেমায় অযাচিতভাবে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে শিশু-কিশোর-তরুণদের নেশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আগামী প্রজন্মকে নেশার কবল থেকে সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের দায়ে তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের উদ্যোগে ‘ধূর্ত তামাক কোম্পানির হাত থেকে শিশু-কিশোর-তরুণদের সুরক্ষার দাবিতে স্কেটিং র্যালি’-তে বক্তারা এ দাবি জানান। স্কেটিং র্যালি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
প্রত্যাশার মহাসচিব হেলাল আহমেদের সভাপতিত্বে র্যালির শুরুতে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের টেকনিক্যাল এডভাইজর আমিনুল ইসলাম সুজন, ডেভেলপমেন্ট এক্টিভিটিজ সোসাইটি (ডাস) এর কর্মসূচি সমন্বয়কারী মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের প্রতিনিধি সামিউল হাসান সজীব এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর প্রজেক্ট অফিসার আজিম খান।
হেলাল আহমেদ বলেন, শিশু-কিশোরদের ধূমপানের নেশায় ধাবিত করতে তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্ঘন করে শিশুদের আই-লেবেলে আকর্ষণীয়ভাবে সিগারেটের মোড়ক সাজিয়ে রাখছে। ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে সুপার শপ-সর্বত্র তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে সিগারেটসহ তামাক বিক্রির দোকান স্থাপন নিষিদ্ধ করতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরণের প্রলুব্ধকর প্রচারণা বন্ধে জোরালোভাবে আইন বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া, শিশুদের পরোক্ষ ধূমপান থেকে সুরক্ষায় শিশুরা যাতায়াত করে এমন সকল স্থান শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হবে।
আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, নাটক-সিনেমায় ধূমপান ও মাদক সেবনের মতো দৃশ্য অযাচিতভাবে দেখানো হচ্ছে। আইন লঙ্ঘন করে তুফান নামক সিনেমায় ৬০ বারের মতো ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন ও ধূমপানের দৃশ্যসহ জংলি সিনেমার পোস্টার করা হয়েছে। এসব অনৈতিক কাজ ও আইনের লঙ্ঘন করে ধূমপানের প্রচারণা শিশুদের নেশার দিকে প্রলুব্ধ করে। তাই নাটক-সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের দায়ে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, শিশুরা অনেক গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। অনেক গণপরিবহনের চালক ও হেলপার ধূমপান করছে। এছাড়া গণপরিবহনে আইন অনুযায়ী ধূমপান হইতে বিরত থাকুন-ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ লেখা ও ধূমপানমুক্ত সাইন প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। গণপরিবহনে এ সাইনেজ প্রদর্শন নিশ্চিত করাতে হবে।
সামিউল হাসান সজীব বলেন, ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলো স্মোকিং জোন করে দিচ্ছে। রেস্টুরেন্টে সিগারেট প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। ফলে নারী-শিশুসহ অধূমপায়ীরা রেস্টুরেন্টে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করাসহ সকল রেস্টুরেন্ট শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, মাদকের ছোবল থেকে শিশু-কিশোর-তরুণদের সুরক্ষা করতে হবে। মাদকের অন্যতম প্রবেশ পথ হচ্ছে ধূমপান। তাই ধূমপান নিয়ন্ত্রণসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।
মন্তব্য করুন