বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। এক যুগের বেশি হলেও নানা সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। বিশেষ করে আবাসিক সংকট প্রকোপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭৭ শতাংশ বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুযোগ থেকে। আবাসিক হল সংকট ও সিটের অপর্যাপ্ততা রয়েছে অনেক বেশি। ছেলেমেয়েদের আলাদা দুটি করে মোট ৪টি ছোট হল রয়েছে। যেখানে আসন সংখ্যাও সীমিত। ফলে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা আসন থেকে বঞ্চিত থাকে। যাদের আর্থিক অস্বচ্ছলতা রয়েছে তারাও হলে উঠতে পারেন না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৬টি বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম দিয়ে যাত্রা শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ২৫টি বিভাগে স্নাতক ও সমাজকর্ম ব্যতীত বাকি ২৪টি বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও কাটেনি শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। এ ছাড়া কক্ষ ও শিক্ষক সংকট রয়েছে তীব্র। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। ফলে সবদিক দিয়ে সেশনজট রয়েছে অধিকাংশ বিভাগে। আবাসিক হলে আসন না পেয়ে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর শিক্ষাজীবনে পড়ে নানা প্রভাব।
রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫টি বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৮০১৬ জন। ২০২২-২৩ বর্ষে ৭৭ আসন ফাঁকা রেখে নতুন আরও ভর্তি হয়েছে ১৫৫৩ জন শিক্ষার্থী। ৭৭ আসনে ভর্তি সম্পন্ন হলে যার সংখ্যা দাড়াবে ১৬৩০ জন। যা মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার দাঁড়াবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের দুটি করে মোট চারটি হলে আসন সংখ্যা রয়েছে ১২০২টি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলে হলে ২৮৮টি, শেরে বাংলা হলে ৩০০টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ৩১৪টি ও শেখ হাসিনা হলে ৩০০টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে ‘মাস্টার্স জোন’ বাদে বাকি আসনগুলোতে একটি কক্ষে দুজন করে মোট আটজন শিক্ষার্থী থাকে। সেই হিসেবে চারটি হলে মোট ১৮৬৭ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছে । অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যার হিসেবে শতকরা মাত্র ২৩ জন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে আসনের সুযোগ পাচ্ছে। বাকি ৭৭ জন শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র বা বিভিন্ন মেস ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আবাসন সংকটের কারণে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হয় তাদের। প্রতি মাসেই সিট ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচরাচর সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। অনেক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যে ৪টি হল রয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অপ্রতুল। চারজনের রুমে আটজনে থেকেও মোট শিক্ষার্থীর নগন্য সংখ্যক এখানে আবাসনের সু্যোগ পায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত হলকেন্দ্রীক শিক্ষার্থীদের মানবিক এবং সামাজিক গুণাবলী বিকশিত হয়। হল ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংষ্কৃতি গড়ে উঠার ক্ষেত্রেও ব্যবধান এখানে সুস্পষ্ট। সার্বিক দিক বিবেচনা করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আরো আবাসিক হল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের অন্যতম চাওয়া এবং এটি সময়ের দাবি।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সুকান্ত বৈদ্য বলেন, আবাসিক সংকট এর অনেক কারণ থাকলেও প্রধান কারণ হিসেবে আমি মনে করি, প্রশাসন স্বজ্ঞানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা। ক্লাস রুম না থাকার পরেও তারা সব কিছু জেনে বুঝে সিট সংখ্যা বাড়ানো। যে চারটা হল আছে তাতে সক্ষমতার থেকেও দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে অবস্থান করে, যেখানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই বললেই চলে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলে সিট না পেয়ে বাইরে থাকতে বাধ্য হয়। যেখানে নিরাপত্তা, খাবার পানি ইস্যু সাথে বাড়ির মালিক দের ভাড়া ডাকাতি তো আছেই। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত সরকারি বেসরকারি যেকোনভাবে হোক অতিদ্রুত এই সমস্যা সমধানে কাজ করা।
গনিত বিভাগের মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আবাসন সংকটের কারণে পড়াশোনা, মানসিক স্বাস্থ্য ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সমস্যা হয়। অনেকের আর্থিক সংকট থাকায় বাইরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে, যা শিক্ষাজীবনকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই, এই সংকট সমাধানে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আমাদের শিক্ষার্থীদের তুলনায় হল সংখ্যা কম হওয়ায় আবাসিক সমস্যা আছে। সরকার যদি নতুন হল অনুমোদন দেয় সেক্ষেত্রে আবাসিক সমস্যা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি। অতিদ্রুত আবাসিক হল ও ভবন নির্মাণ করার প্রচেষ্টা আমাদের আছে । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সংকট নিরসনে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
মন্তব্য করুন